ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২

বিদেশি ঋণে নতুন রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ, বাড়ছে রিজার্ভ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৯ ২০:২০:৩২

বিদেশি ঋণে নতুন রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ, বাড়ছে রিজার্ভ

নিজস্ব প্রকিবেদক: বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণের নতুন রেকর্ড গড়েছে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে শুধু গত জুন মাসেই পাওয়া ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এতে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ১১ হাজার ২১৫ কোটি ডলার। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে এই ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, গত বছরের ৫ আগস্ট আ’লীগ সরকার বিদায়ের পর থেকে অর্থ পাচার রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর প্রভাবও পড়েছে ঋণ পরিশোধে। বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেকর্ড ৫৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে, যা আগের অর্থবছরের ৪৭৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের তুলনায় বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় ছাড়িয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল রেকর্ড। রপ্তানি আয়েও হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। কম সুদের বৈদেশিক ঋণের ফলে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। গত জুন শেষে দেশের গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে, আর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (বিপিএম–৬) অনুযায়ী রিজার্ভ হয়েছে ২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার যা প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ডলারের দামও এখন তুলনামূলক স্থিতিশীল। ১২২ টাকার আশেপাশে দর স্থায়ী থাকলেও একসময় তা কমে ১১৯ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছিল। রেমিট্যান্স ও রপ্তানির প্রবাহ যেন ব্যাহত না হয়, সে জন্য ডলার কেনা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরেই ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ইতোমধ্যে ১৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার কিনেছে তারা। এর ফলে আকুর বিল পরিশোধের পরও রিজার্ভ আবার ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

জুন শেষে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারে, যা তিন মাস আগে ছিল ১৯ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। তবে সরকারি খাতে ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৩৮ কোটি ডলারে; তিন মাস আগে এটি ছিল ৮ হাজার ৪৯২ কোটি ডলার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা-পরবর্তী সময়ে নীতি শিথিলতার সুযোগ নিয়ে দেশে অর্থ পাচার বেড়ে গিয়েছিল। ফলে ২০২১ সালের ৮৪ টাকার ডলার ২০২৩ সালের মাঝামাঝি গিয়ে ১২২ টাকায় পৌঁছায়। সেই সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমে আসে ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। তবে বর্তমান সরকারের কঠোর পদক্ষেপে রিজার্ভ আবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলারে।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটির হিসাবে, বিগত প্রায় ১৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ২৩৪ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স দুটোই বাড়ছে। ফলে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে না, বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনতে পারছে। এতে রিজার্ভ আরও বাড়ছে এবং ডলার বাজারে স্থিতি ফিরে এসেছে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত