ঢাকা, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জানা গেল বাংলাদেশি নারীদের বিয়েতে চীনের নিষেধের কারণ

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ মে ২৭ ২১:১৬:২৯
জানা গেল বাংলাদেশি নারীদের বিয়েতে চীনের নিষেধের কারণ

বিশ্বজুড়ে বিয়ে ও সম্পর্ক সংকট নতুন নয়। তবে চীনে এটি এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় হাজার হাজার পুরুষ বিয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এই ঘাটতি পূরণে অনেকেই বিদেশি নারী- বিশেষ করে বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে স্ত্রী আনার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে এটি এখন শুধু সামাজিক সংকটই নয় বরং মানবপাচার ও নারীর অধিকার লঙ্ঘনের ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।

প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটিতে বলা হয়, ‘এই বাস্তবতায় বাংলাদেশে অবস্থিত চীনের দূতাবাস ২৫ মে এক ঘোষণায় চীনা নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছে, তারা যেন বাংলাদেশি নারীদের বিয়ে না করেন। কারণ, এতে প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দূতাবাস একে সরাসরি ‘বিদেশি বউ কেনা’র মতো ঘটনা বলে অভিহিত করেছে।’

প্রথমে বিষয়টি কৌতুক বা অবাস্তব মনে হলেও এর পেছনে লুকিয়ে আছে মর্মান্তিক গল্প- নারী পাচার, জোর করে বিয়ে ও নির্যাতনের একটি দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক চক্র।

চীনের এক সন্তান নীতি গ্রহণ করায় পুরুষ সন্তান নেওয়ার প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশটিতে নারীদের তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আর এই সংকট দূর করতে অবিবাহিত পুরুষরা এখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো—বিশেষত বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে নারীদের বিয়ে করার চেষ্টা করছে। বাস্তবে এসব বিয়ে অনেক সময় নারীদের পাচার এবং জোরপূর্বক বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ করার ঘটনাতে পরিণত হচ্ছে।

লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিং গাও ইন্ডিয়া টুডে-কে জানান, “চীনের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বিয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অবৈধ বিয়ের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে শিশু ও তরুণীদের পাচার করে এনে বিয়ের নামে বিক্রি করা হচ্ছে।”

এই পাচারকারীরা এখন মূলত বাংলাদেশ ও নেপালের গ্রামের গরিব পরিবারগুলোকেই টার্গেট করছে। ভালো চাকরি ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদের চীনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং চলাফেরায় কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।

চীনে নেওয়ার পর এসব তরুণীকে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার ডলারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মূল্য নির্ধারিত হয় বয়স, চেহারা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে। এরপর জোর করে কোনো চীনা অবিবাহিত কৃষক বা শ্রমজীবী পুরুষের সঙ্গে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তাদের কোনো মতামত বা সম্মতির সুযোগ থাকে না।

‘বিয়ে’র পর তাদের সন্তান ধারণে বাধ্য করা হয়। পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে তুলে দেওয়া হয়। যার ফলে তাদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

একাধিক গবেষণা বলছে, ‘২০২০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে চীনে প্রায় ৫ কোটি পুরুষ অবিবাহিত থেকে যাবেন। এই বাস্তবতায় চীনের সমাজে বিয়ের বয়স কমিয়ে আনার দাবি উঠেছে। তবে এতে কোনো সমাধান আসছে না। বরং পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত হচ্ছে।’

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১৯ সালেই সতর্ক করেছিল, মিয়ানমার থেকে চীনে নারীদের পাচার করা হচ্ছে। এখন সেই পাচারচক্রে বাংলাদেশ ও নেপালও জড়িয়ে পড়েছে।

চীনের অভ্যন্তরীণ লিঙ্গ ভারসাম্যহীনতা ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর সহজলভ্য নারীদের উপর নির্ভরতা মিলিয়ে এক ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো এই সংকট মোকাবেলায় আন্তঃদেশীয় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত