ঢাকা, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে ভয়াবহ বিপদ, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
.jpg)
২০২১ সালের নভেম্বর—প্রযুক্তির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যুক্ত হলো, যেটি বদলে দিলো বিশ্বজুড়ে মানুষের কাজের ধরন।
মাইক্রোসফটের সহযোগিতায় ওপেনএআই যাত্রা শুরু করল চ্যাটজিপিটি নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এক চ্যাটবট। স্বল্প সময়ে এটি হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি জগতের অন্যতম আলোচিত ও প্রভাবশালী আবিষ্কার।
চ্যাটজিপিটির আবির্ভাব আমাদের জীবনে এনেছে এক নতুন গতি। প্রশ্ন করলেই মুহূর্তে উত্তর, চাইলেই কবিতা লিখে দিচ্ছে সে। রান্নার রেসিপি থেকে শুরু করে কঠিন গণিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসাইনমেন্ট বা গবেষণা রিপোর্ট—সবকিছুতেই সাহায্য করে চ্যাটজিপিটি। এমনকি প্রেমিকাকে মন জয়ের কৌশল জানতেও কেউ কেউ এর সাহায্য নিচ্ছেন।
তিন বছরের ব্যবধানে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার এতটাই বেড়েছে যে তা এখন গবেষকদের চিন্তায় ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি)-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ চ্যাটজিপিটির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এর প্রভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।
গবেষণাটি ৫৪ জন প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে ৪ মাস ধরে পরিচালিত হয়। অংশগ্রহণকারীদের তিনটি দলে ভাগ করে প্রবন্ধ লেখার টাস্ক দেওয়া হয়। প্রথম দল শুধুমাত্র নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহার করে লেখে, দ্বিতীয় দল ব্যবহার করে সার্চ ইঞ্জিন আর তৃতীয় দল লেখে চ্যাটজিপিটির সাহায্যে।
গবেষকরা লেখার সময় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কে ঘটে যাওয়া তড়িৎ সংকেত (electrical activity) পর্যবেক্ষণ করেন এবং লেখার গুণগত মান, মনোযোগ ও সম্পৃক্ততা বিশ্লেষণ করেন। দেখা গেছে, যারা চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছেন তাদের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিল। এমনকি তারা নিজেদের লেখায় কোন উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলেন তাও মনে রাখতে পারেননি। তাদের লেখার সঙ্গে মানসিক সংযোগও ছিল খুবই দুর্বল।
চতুর্থ ধাপে প্রতিটি দলের ভূমিকা পাল্টে দেওয়া হয়। এআই ব্যবহারকারীরা এবার শুধু মস্তিষ্ক ব্যবহার করেন আর যারা আগের ধাপে শুধু মস্তিষ্ক ব্যবহার করেছিলেন তারা এবার চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন। দেখা যায়, যারা চ্যাটজিপিটি থেকে মস্তিষ্কে ফিরে এসেছেন তারা মনোযোগ ও গুণমান—উভয়দিক থেকেই খারাপ করেছেন।
গবেষকেরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে এআই ব্যবহারে মস্তিষ্কের দক্ষতা কমে যেতে পারে। শেখার ক্ষমতা, মনোযোগ এবং সৃজনশীলতা হ্রাস পেতে পারে। যদিও গবেষণার চূড়ান্ত ধাপে মাত্র ১৮ জন অংশগ্রহণ করেছেন, তাই এই ফলাফলকে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। নিশ্চিত ফলাফলের জন্য আরও বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
তাহলে কি এআই ধীরে ধীরে আমাদের মস্তিষ্ককে নিষ্ক্রিয় করে দিচ্ছে? এক কথায় বলা যায় না। গবেষণার পদ্ধতি, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ও সময়কাল—সবকিছু মিলিয়ে এটি একটি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ। তবে উদ্বেগের কারণ যে একেবারে নেই, তাও নয়।
এটাই প্রথম না—মানুষ যন্ত্রে ভর করে চিন্তাশক্তি কমিয়ে ফেলেছে। ১৯৭০-এর দশকে ক্যালকুলেটরের ব্যবহার শুরুর পরেও একই রকম বিতর্ক হয়েছিল। মানুষ হিসাব করা ভুলে যাবে—এই আশঙ্কায় পরীক্ষার ধরণ কঠোর করে দেওয়া হয়েছিল। তবে পরে শিক্ষার্থীদের ক্যালকুলেটর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলেও তাদের সমস্যার জটিলতা বাড়ানো হয় যাতে চিন্তাশক্তি বজায় থাকে।
ঠিক তেমনই, এআই-ও এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। কিন্তু তা যেন মস্তিষ্কের বিকল্প না হয়ে ওঠে—বরং হোক সহায়ক। সচেতন ব্যবহারের মাধ্যমেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আমাদের সহাবস্থান সম্ভব।
তথ্য : দ্য কনভার্সেশন
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- শেয়ারবাজারের পাঁচ কোম্পানিতে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ
- নভেম্বর-ডিসেম্বরে হতে পারে ঢাবির ৫৪তম সমাবর্তন
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে তিন কোম্পানি
- ঢাবি অ্যালামনাইয়ের বৃত্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ১২ কোম্পানি
- প্রথম প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ করেছে পাঁচ কোম্পানি
- ১৭ কোম্পানি শেয়ারে সফল বিনিয়োগ, ২০ শতাংশের বেশি মুনাফা
- ভারতের ২৫০ সেনা নিহত
- হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে, মারা গেলেন ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী
- চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে ভয়াবহ বিপদ, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
- শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতে বিক্রেতা সংকটের নতুন দিগন্ত
- ঢাবির ২০১৮-১৯ সেশনের অছাত্ররা হতে পারবেন না ভোটার-প্রার্থী
- তাসনিম জারার হাফ প্যান্ট পরা ভাইরাল ছবি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য
- কারো বাবা শেষ সম্বল বিক্রি করেছেন, কারো বাবাই নেই
- শিক্ষার্থীদের জন্য সবসময় ডুয়ার অফিস খোলা : শামসুজ্জামান দুদু