ঢাকা, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

মহাকাশে হারিয়ে গেল স্যাটেলাইট, জলবায়ু গবেষণায় বড় ধাক্কা

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুলাই ০৪ ১৫:০৪:৪১
মহাকাশে হারিয়ে গেল স্যাটেলাইট, জলবায়ু গবেষণায় বড় ধাক্কা

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা মিথেন গ্যাস শনাক্তে ব্যবহারের জন্য তৈরি ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলারের উপগ্রহ ‘মিথেনস্যাট’ মহাকাশে হারিয়ে গেছে। উপগ্রহটির সঙ্গে গত দশ দিন ধরে কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এতে করে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু বিজ্ঞানীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

‘মিথেনস্যাট’ নামের এই উপগ্রহটি গত বছর ইলন মাস্কের স্পেসএক্স রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে পাঠানো হয়। প্রকল্পটির পেছনে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে গুগল, জেফ বেজোসসহ বেশ কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্ব। পাঁচ বছর মেয়াদি এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল তেল, গ্যাস, কৃষি ও ভাগাড় থেকে নির্গত মিথেন গ্যাস শনাক্ত করে দূষণকারী বড় উৎসগুলো চিহ্নিত করা এবং নির্গমন হ্রাসে পদক্ষেপ নেওয়া।

উপগ্রহটির তত্ত্বাবধানে থাকা পরিবেশবাদী সংস্থা এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড (ইডিএফ) জানিয়েছে, তারা উপগ্রহটির সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ পাচ্ছে না এবং সম্ভবত সেটি পুনরুদ্ধার করা যাবে না। যদিও কিছু সফটওয়্যার ভবিষ্যতে পুনরায় ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে নতুন উপগ্রহ পাঠানো হবে কিনা সে বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

মিথেন গ্যাস যদিও বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো দীর্ঘস্থায়ী নয়, তবু শতবর্ষের প্রভাবে এটি CO₂-এর চেয়ে প্রায় ২৮ গুণ বেশি শক্তিশালী। তেল ও গ্যাস উৎপাদন, কৃষি এবং ভাগাড়ে জৈব পদার্থের পচনের ফলে এই গ্যাসের নির্গমন ঘটে। মিথেন নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার তথ্য বলছে এর নির্গমন প্রতিবছরই বাড়ছে।

‘মিথেনস্যাট’ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং সব দেশের সরকারের জন্য তথ্য উন্মুক্ত রাখা। এতে সরকার ও বিজ্ঞানীরা নির্ভরযোগ্য ডেটার ভিত্তিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। গুগল তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি বৈশ্বিক মিথেন মানচিত্র তৈরির পরিকল্পনা করেছিল।

এদিকে বর্তমানে কার্যরত যেসব উপগ্রহ মিথেন নির্গমন পর্যবেক্ষণ করে, সেগুলোর বেশিরভাগই বেসরকারিভাবে পরিচালিত হওয়ায় অনেক তথ্যই গোপন থাকে। মিথেনস্যাট ছিল ব্যতিক্রম। এতে থাকা উন্নত সেন্সর ছোট উৎস ও ‘সুপার এমিটার’—উভয়কেই শনাক্ত করতে পারত। কৃষি খাতের ছড়িয়ে থাকা নির্গমন সনাক্তে এই সংবেদনশীলতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

মিথেন তথ্য সরবরাহে আরেকটি বড় উৎস হলো ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার সেন্টিনেল-৫পি উপগ্রহ। এটি এখনো তথ্য পাঠালেও এর মিশন আগামী অক্টোবরে শেষ হতে যাচ্ছে। ফলে এটি অবসরে গেলে বিশ্বজুড়ে গ্রিনহাউস গ্যাস নিরীক্ষার প্রচেষ্টায় বড় ঘাটতি দেখা দেবে।

ইডিএফ বলেছে, “জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় সাহসী পদক্ষেপ ও ঝুঁকি নেওয়া জরুরি। মিথেনস্যাট ছিল সেই চেষ্টার প্রতীক—যেটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ সচেতনতাকে একত্র করেছিল।”

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত