ঢাকা, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

নিউইয়র্কের ধনীদের নিশানায় মামদানি

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুলাই ১১ ১৮:৫৪:৩১
নিউইয়র্কের ধনীদের নিশানায় মামদানি

নিউইয়র্ক সিটির সম্ভাব্য পরবর্তী মেয়র হিসেবে ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানিকে ঠেকাতে শহরের শীর্ষ ধনী ও করপোরেট ব্যক্তিত্বরা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তারা অন্তত ২ কোটি ডলারের একটি প্রতিরোধ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নিউ ইয়র্কার্স ফর অ্যা বেটার ফিউচার মেয়র ২৫’ নামের একটি স্বাধীন ব্যয়ভিত্তিক গোষ্ঠী এই প্রচারণা শুরু করেছে। নির্বাচন বোর্ডে নিবন্ধনের পর গত মঙ্গলবার থেকেই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নিউইয়র্কের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি এই প্রতিরোধ উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হচ্ছেন। পারশিং স্কয়ারের সিইও বিল অ্যাকম্যান, সাবেক মেয়র রুডি গিলানি এবং বিনিয়োগকারী গ্যারি বারনেটসহ অনেকে জোহরান মামদানিকে পরাজিত করতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে রুডি গিলানি ও সাবেক গোয়েন্দা বো ডিটল একটি আলাদা গ্রুপ গঠন করে ১০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের পরিকল্পনা করছেন। তাদের একটাই প্রশ্ন, ‘এই ছেলেটাকে থামানো যাবে কীভাবে?’

গত মাসে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে মামদানি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করেন। তার এ জয়ের পর থেকেই নিউইয়র্কের করপোরেট মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। যদি একজন সমাজতন্ত্রী সিটি হলের নিয়ন্ত্রণ নেয়, তবে ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা ভেঙে পড়তে পারে।

এ পরিস্থিতিতে ‘জেপি মরগ্যান চেজ’-এর সিইও জেমি ডাইমন এক বক্তব্যে জোহরান মামদানিকে ‘মার্ক্সবাদী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং তাঁর নীতিগুলোকে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন আদর্শিক কল্পকাহিনি বলে উল্লেখ করেছেন।

তবে মামদানিকে কৌশলগতভাবে কীভাবে পরাজিত করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধী পক্ষের প্রচারণা এখনো বিশৃঙ্খল ও নেতিবাচক। যা ভোটারদের মধ্যে উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস্টার ফুকস মন্তব্য করেছেন, “মানুষ জটিল সমস্যার সহজ সমাধান খোঁজে, কিন্তু ভোটারদের আস্থা ছাড়া শুধু অর্থ খরচ করে লাভ হয় না।”

এদিকে জোহরান মামদানিও ব্যবসায়িক মহলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনি শিগগিরই নিউইয়র্ক সিটির করপোরেট সংগঠন ‘পার্টনারশিপ ফর নিউ ইয়র্ক সিটি’র একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। উল্লেখ্য, এই সংগঠনের সদস্য তালিকায় রয়েছে সিটি গ্রুপ, মরগ্যান স্ট্যানলি এবং জেপি মরগ্যান চেজের মতো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান।

ডেমোক্রেটিক দলের টিকিট নিশ্চিত হলেও মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এখনো মাঠে আছেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস, সাবেক ইউএস অ্যাটর্নি জিম ওয়ালডেন, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া। এর মধ্যে ডেমোক্র্যাট দলীয় অ্যাডামস ও কুমো এখনো প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। ফলে বিরোধীদের মধ্যে ঐক্য গড়ার পথ আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

ভাড়ার নিয়ন্ত্রণ ও নগর পরিচালিত মুদি দোকান স্থাপনের মতো জোহরান মামদানির নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলো শহরের ধনী ও করপোরেট শ্রেণির মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। মামদানি বিরোধী প্রচারণার অংশ হিসেবে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস সম্প্রতি ম্যানহাটনের এসএল গ্রিনের এক রুফটপ আয়োজনে অংশ নিয়ে এক মিলিয়ন ডলার অনুদান সংগ্রহ করেন। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত টিভি ব্যক্তিত্ব ড. ফিল স্পষ্টভাবেই বলেন, “বিনা মূল্যে কিছুই আসে না বন্ধু!”

তবে শেষ পর্যন্ত মামদানির মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী কে হবেন, তা এখনও অনিশ্চিত। যদিও একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তবু নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে- নিউইয়র্ক সিটির আসন্ন মেয়র নির্বাচন হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক লড়াইগুলোর একটি।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত