ঢাকা, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার কারসাজি, তদন্তে নেমেছে বিএসইসি

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ জুলাই ০৪ ২২:২৩:৩২
আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার কারসাজি, তদন্তে নেমেছে বিএসইসি

শেয়ারবাজারে তালিাকভুক্ত তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেডের ডাটা সেন্টার বিক্রি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এর জন্য দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া এবং সহকারী পরিচালক মো. মোসাব্বির আল আশিক। কমিটিকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেড তাদের ডাটা সেন্টার বিক্রি করার ঘোষণা দেয়, যা কোম্পানির মুনাফার ওপর প্রভাব ফেলবে বলে জানানো হয়। এই ঘোষণার এক বছরের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ এবং ডাটা সেন্টার বিক্রির প্রকৃত সুবিধা বা উদ্দেশ্য খুঁজে বের করতেই বিএসইসি এই তদন্তে নেমেছে।

বিএসইসি মনে করে, শেয়ারবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এই তদন্ত পরিচালনা করা অপরিহার্য। তদন্ত কমিটি দেখবে, ডাটা সেন্টার বিক্রির পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো সুবিধা ছিল কিনা এবং ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ কী।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২ সালের ১ আগস্ট আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ৩৬ টাকা ১০ পয়সা। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি এটি সর্বোচ্চ ৭২ টাকা ৫০ পয়সায় উন্নীত হয়। পরবর্তীতে ৫ জুন এই মূল্য আরও বেড়ে ৮২ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ ডাটা সেন্টার বিক্রির সংবাদ প্রকাশের পর এক বছরের ব্যবধানে আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

এরপর ২০২৪ সালে কোম্পানিটি ২০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩০ টাকায় ১:২ অনুপাতে রাইট শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজার থেকে ৯২ কোটি ৯৭ লাখ ৯৯ হাজার ১২০ টাকা উত্তোলন করেছে। রাইট শেয়ার ইস্যুর পর কোম্পানিটির মুনাফাও কমে গেছে এবং শেয়ার দামও ১৮ টাকার নিচে তলানিতে নেমে এসেছে।

প্রসঙ্গত, আমরা নেটওয়ার্ক ২০১৭ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে শেয়ারবাজার থেকে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। আইপিও-তে প্রতিটি শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস ছিল ৩৯ টাকা। আইপিও'র মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ঋণ পরিশোধ, ব্যবসা সম্প্রসারণ, ডাটা সেন্টার স্থাপন ও আইপিও খাতে ব্যবহারের কথা ছিল।

তবে ডাটা সেন্টার স্থাপনের ৫ বছর পরও কোম্পানিটি তা থেকে কোনো লাভের মুখ দেখেনি। যার ফলে ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর মাসে কোম্পানি ঘোষণা করে, ডাটা সেন্টারটি ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় তাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আমরা হোল্ডিংসের কাছে বিক্রি করবে। যেখানে এই সম্পদের বুক ভ্যালু ছিল ৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এরফলে সম্পদ বিক্রি করে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা লাভ করবে, যা সরাসরি আমরা নেটওয়ার্কের লাভের ওপর প্রভাব পড়বে।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে, আমরা নেটওয়ার্ক শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ছিল ২ টাকা ৪৬ পয়সা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৪৩ পয়সা। ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকা ০১ পয়সায়।

কিন্তু ডিভিডেন্ড ঘোষণা করলেও কোম্পানিটি ঘোষিত ডিভিডেন্ড শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণ করেনি। যে কারণে কোম্পানিটির শেয়ার বর্তমানে 'জেড' ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে।

আমরা নেটওয়ার্কের পরিশোধিত মূলধন ৯২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং মোট শেয়ারের সংখ্যা ৯ কোটি ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯১২টি। ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের কাছে ৩৩.০৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২১.৭১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৫.২৫ শতাংশ শেয়ার আছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত