ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২

মার্জিন ঋণে কড়াকড়ি, সীমিত আয়ের ব্যক্তিদের মার্জিন ঋণ নয়

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ আগস্ট ১৯ ২৩:১৭:৩৮
মার্জিন ঋণে কড়াকড়ি, সীমিত আয়ের ব্যক্তিদের মার্জিন ঋণ নয়

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নতুন "মার্জিন বিধিমালা (রহিতকরণ), ২০২৫"-এর খসড়া প্রকাশ করেছে। এই খসড়া অনুযায়ী, শেয়ার কেনার জন্য মার্জিন ঋণ পেতে একজন বিনিয়োগকারীর এক বছরে গড়ে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) প্রকাশিত খসড়াটি বিধিমালায় বলা হয়েছে, যাদের নিয়মিত আয়ের উৎস নেই, যেমন ছাত্র, গৃহিণী এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা, তারা মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন না। তাদের সীমিত আর্থিক সক্ষমতা এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বিধিমালা সম্পর্কে জনসাধারণের মতামত জানতে বিএসইসি আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে।

মার্জিন ঋণ হলো শেয়ার কেনা-বেচার জন্য ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের দেওয়া ঋণ। যেহেতু এই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর সাধারণত আয়ের কোনো স্থিতিশীল উৎস থাকে না বা সীমিত আয়ের ওপর নির্ভরশীল, তাই ধার করা টাকায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই ঝুঁকি কমানো এবং তাদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই বিএসইসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

খসড়া বিধিতে বলা হয়েছে, মার্জিন কেবল ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের দেওয়া যাবে, যৌথ বা নগদ ভিত্তিতে নয়। মার্জিন চুক্তি এক বছরের জন্য বৈধ হবে এবং এর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য উভয় পক্ষের পারস্পরিক সম্মতি প্রয়োজন।

অবাস্তব লাভের (unrealised gains) বিপরীতে মার্জিন দেওয়া যাবে না। মার্জিন ঋণ শুধুমাত্র সিকিউরিটিজ কেনার জন্য ব্যবহার করা যাবে, নগদ টাকা উত্তোলন বা স্থানান্তরের অনুমতি নেই। ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত পোর্টফোলিওর ক্ষেত্রে ১:০.৫ অনুপাতে মার্জিন দেওয়া হবে। ১০ লাখ টাকার বেশি পোর্টফোলিওর জন্য এই অনুপাত হবে ১:১।

মার্জিন শুধুমাত্র সেইসব সিকিউরিটিজের জন্য দেওয়া যাবে, যেগুলোর ফ্রি ফ্লোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ৫০ কোটি টাকার বেশি। যদি কোনো সিকিউরিটিজের বাজার মূলধন পরে এই সীমার নিচে নেমে যায়, তবে অ্যাকাউন্ট সমন্বয় করার জন্য পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে সেই সিকিউরিটিজ বিক্রি করতে হবে।

এছাড়াও, ৩০-এর উপরে ট্রেইলিং পিই রেশিও (P/E ratio) থাকা শেয়ারগুলো মার্জিনের জন্য যোগ্য হবে না; সেক্টরাল পিই রেশিও বা ৩০-এর নিচে থাকা রেশিও প্রযোজ্য হবে। স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়মিত পিই রেশিও প্রকাশ করবে।

অডিটেড আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখযোগ্য ভুল (material misstatement), অস্তিত্বের ঝুঁকি (going concern risk) বা বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ার মার্জিনের জন্য উপযুক্ত হবে না। "বি" বা "জেড" ক্যাটাগরির শেয়ার, তালিকাভুক্ত নয় এমন সিকিউরিটিজ বা এসএমই, এটিবি (ATB) বা ওটিসি (OTC) বোর্ডের শেয়ারও অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। মার্জিন ঋণদাতা বা তার প্রবর্তকদের দ্বারা ইস্যু করা সিকিউরিটিজের জন্য মার্জিন দেওয়া যাবে না। তবে বিনিয়োগকারীরা নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে এই ধরনের শেয়ার কিনতে পারবেন। পাবলিক অফার, টেকওভার, উল্লেখযোগ্য শেয়ার অধিগ্রহণ বা পরিচালক হওয়ার জন্য মার্জিন ব্যবহার করা যাবে না।

বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণ ব্যবহার করে কোনো কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন না। পরিচালকরাও নিজেদের কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য মার্জিন নিতে পারবেন না। লক-ইন, লিয়েন, ব্লক করা বা পরিচালকদের কাছে থাকা শেয়ার মার্জিন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

মার্জিনের বিনিময়ে বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত সুদ বা মুনাফা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে নগদ বা পর্যাপ্ত শেয়ার বিক্রি করে পরিশোধ করতে হবে। মার্জিন দেওয়ার আগে বিনিয়োগকারীর আয়ের উৎস যাচাই করতে হবে। এর জন্য আয়ের সার্টিফিকেট, বেতনের বিবরণী, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) যাচাই করা হবে।

মার্জিন অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বিনিয়োগকারীকে সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য দিতে হবে, যা ব্রোকারেজ হাউস যাচাই করবে। মিথ্যা তথ্য দিলে কমিশনের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মার্জিন কখনোই বিনিয়োগকারীর ইক্যুইটির (equity) বেশি হবে না। সাধারণত, ইক্যুইটি-টু-মার্জিন অনুপাত ১:১ হয়ে থাকে। যদি কোনো কোম্পানির বাজার মূলধন তার ইস্যুকৃত মূলধনের সাত গুণের বেশি হয়, তবে মার্জিন অনুপাত ১:০.৫ হবে। এমন কোম্পানিগুলোর তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

সর্বদা বিনিয়োগকারীর ইক্যুইটি অবশ্যই মার্জিনের কমপক্ষে ৭৫% বা পোর্টফোলিওর মূল্যের ১৭৫% হতে হবে। যদি এই অনুপাত প্রয়োজনীয় মাত্রার নিচে নেমে যায়, তবে ব্রোকারেজ হাউস লিখিতভাবে, ইমেইল এবং এসএমএস-এর মাধ্যমে মার্জিন কল ইস্যু করবে। যদি বিনিয়োগকারী পরপর তিনবার মার্জিন কল পূরণে ব্যর্থ হন, তবে ব্রোকারেজ হাউস সাত দিনের নোটিশ দিয়ে শেয়ার বিক্রি করতে পারবে। যদি বিনিয়োগকারীর ইক্যুইটি ৫০% এর নিচে নেমে যায় বা পোর্টফোলিওর মার্জিন মূল্য ১৫০% এর নিচে নেমে আসে, তবে পূর্ব নোটিশ ছাড়াই শেয়ার বিক্রি করা যাবে। এই ধরনের ক্ষেত্রে অবহেলার দায় ব্রোকারেজ হাউসের ওপর বর্তাবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত