ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ: আটক ২ দালাল, সীমান্তে টহল জোরদার

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ আগস্ট ১৯ ২৩:৪৭:৪১
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ: আটক ২ দালাল, সীমান্তে টহল জোরদার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নেমেছে। জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা রাখাইনের বুথিডং থেকে কলাগাছের ভেলায় চড়ে বিপজ্জনকভাবে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে টেকনাফ সীমান্তে ঢুকছে। স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় তারা ক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে রোহিঙ্গা ও ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সর্বশেষ সোমবার (১৮ আগস্ট) ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল টেকনাফে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পর সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের কড়াকড়ি বাড়ানো হয়েছে, ফলে মঙ্গলবার নতুন করে কোনো অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া যায়নি।

টেকনাফের ২৬ ও ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান জানান, "ভেলায় চড়ে কিছু রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের খবর পেয়েছি। তারা সম্ভবত উখিয়ার ক্যাম্পের দিকে চলে গেছে। মাঝিদের (রোহিঙ্গা প্রতিনিধি) মাধ্যমে জেনেছি, সীমান্তের ওপারে আরও অনেকে জড়ো হয়েছে, তবে তারা ঢুকতে পারেনি।"

এদিকে, সোমবার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তার অভিযোগে স্থানীয় দুই দালাল—শামসুল আলম (৪৫) ও মোহাম্মদ আলমগীর (৩১)—কে বিজিবি আটক করেছে। মঙ্গলবার তাদের মানব পাচার আইনে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে টেকনাফ মডেল থানা।

সীমান্তের বিভিন্ন সূত্র বলছে, গত কয়েকদিনে শতাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। আরও প্রায় দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মংডু সীমান্তে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় জড়ো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা আরাকান আর্মিকে টাকা দিয়ে সীমান্তের কাছে এসেছে এবং সুযোগের অপেক্ষায় আছে।

দালালরা এখন সীমান্তরক্ষীদের নজরদারি এড়াতে নৌকার পরিবর্তে কলাগাছের ভেলা ব্যবহার করছে। কারণ, স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমে নৌকার চলাচল সহজে ধরা পড়লেও কলাগাছের ভেলা শনাক্ত করা কঠিন।

এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, "সীমান্তে আমাদের টহল জোরদার করা হয়েছে এবং অনুপ্রবেশকারীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। তবে এত বড় সীমান্ত পাহারা দেওয়া কঠিন। জেলেরা মাছ ধরার সময় তাদের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় অনেক সময় রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করা মুশকিল হয়ে পড়ে।"

ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, রাখাইনে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করছে, তাদের জিনিসপত্র লুট করছে এবং শ্রমিক হিসেবে খাতাচ্ছে। এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে বর্তমানে সাড়ে ১২ লাখের বেশি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের পর এসেছে প্রায় ৮ লাখ। তবে গত আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত