ঢাকা, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

দিল্লির কাছে পুশইন ইস্যুর ব্যাখ্যা চাইল হাইকোর্ট

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুলাই ১১ ১৯:৪৭:২৯
দিল্লির কাছে পুশইন ইস্যুর ব্যাখ্যা চাইল হাইকোর্ট

“বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর নামে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের নিধন করছে দিল্লি সরকার”—মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন মন্তব্যের পর নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়। এরপর ভারতীয় নাগরিক হয়েও দিল্লিতে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে- এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (১০ জুলাই) বীরভূমের ওই শ্রমিকদের পরিবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। বৃহস্পতিবার আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের (অমিত শাহর দপ্তর) কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে।

আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ওই শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দিল্লির মুখ্যসচিবের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে। রাজ্য সরকারকেও পুরো ঘটনার ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এ মামলার পরবর্তী শুনানি ১৬ জুলাই, বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে।

গত ৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ও রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ বিজেপি শাসিত রাজ্যের পুলিশ পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে। তিনি জানান, সম্প্রতি বীরভূম জেলার মুরারই ও পাইকর থেকে দুটি পরিবারকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের কাছে এসেছে।

সামিরুল ইসলামের বক্তব্য, যদি অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি ধরা পড়ে, তাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী ফেরত পাঠানো উচিত। তবে ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের বহু পরিযায়ী শ্রমিককে বিজেপি শাসিত রাজ্যে আটক রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আইনের পথে লড়াই চালিয়ে যাবো। পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক ভাই-বোনদের জন্য আমাদের সংগ্রাম চলবে। যারা সারাক্ষণ দেশপ্রেমের কথা বলেন, তারা কেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন না? এর পেছনে কোনো বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না তা ভাবার বিষয়।’

বীরভূম জেলার মুরারই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান নিতু রবিদাস জানিয়েছেন, তাদের এলাকার বাসিন্দাদের আটক করে দিল্লি প্রশাসন নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য নথি চেয়েছিল। প্রয়োজনীয় নথি পাঠানোর পরও এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর মেলেনি।

আক্রান্ত দুই পরিবার হলো, পাইকর থানার সুইটি বিবি (৩৩), কুরবান শেখ (১৫), ইমাম শেখ (৫); এবং মুরারই থানার ধীতোরা গ্রামের দানিস শেখ (২৯), সোনালী বিবি (২৬) ও সাবির শেখ (৫)। এ দু’টি পরিবার বহু বছর ধরে দিল্লিতে ইট ভাঙার কাজ করে আসছে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের ১৮ জুন দিল্লির কেএন কাটজু থানা এলাকায় ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। এরপর আটক ব্যক্তিরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়, বাংলাদেশি সন্দেহে তাদের আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। দ্রুত তাদের মুক্ত করতে যেন পরিবারের সদস্যরা দিল্লি চলে আসেন।

খবর পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন। দিল্লিতে পৌঁছনোর পর থানা থেকে জানানো হয়, যাদের আটক করা হয়েছিল, তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং তারা বাংলাদেশে পুশ-ইন হয়ে গেছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের কোন সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাদের পাঠানো হয়েছে, সে বিষয়ে থানার পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের।

প্রসঙ্গত, দিল্লিতে আম আদমি পার্টিকে পরাজিত করে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যারের অভিযোগ, বিজেপি সরকার মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার নেতৃত্বে বাঙালিদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের উদ্দেশ্য করে তারা বেছে বেছে তাদের ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং নিধনের চেষ্টা করছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত