ঢাকা, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

অবৈধ পথে ইউরোপ প্রবেশে শীর্ষে বাংলাদেশ

ডুয়া নিউজ- প্রবাস
২০২৫ জুলাই ১১ ১৬:৫২:২৮
অবৈধ পথে ইউরোপ প্রবেশে শীর্ষে বাংলাদেশ

ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ পথ হিসেবে আবারও উঠে এসেছে সেন্ট্রাল মেডিটেরেনিয়ান রুটের নাম। এই রুট ব্যবহার করে লিবিয়া হয়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসী ইতালিতে প্রবেশ করছেন।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত পর্যবেক্ষণ সংস্থা ফ্রন্টেক্স প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে এই রুটে অভিবাসী প্রবেশের হার ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৩০০ জনে। এর মধ্যে শুধু লিবিয়া থেকে ইতালিতে পৌঁছেছেন প্রায় ২০ হাজার ৮০০ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি।

ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, লিবিয়া হয়ে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশ করা অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিরা সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছেন। তাদের পরেই রয়েছেন মিশরীয় ও আফগান নাগরিকরা। এই বিপজ্জনক রুটে যাত্রা করতে গিয়ে অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছেন, আবার অনেকে মানবপাচার চক্রের ফাঁদে পড়ছেন।

যদিও সামগ্রিকভাবে ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসনের হার কমেছে, তবে সেন্ট্রাল মেডিটেরেনিয়ান রুটে চাপ বরং বেড়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসনের সংখ্যা ২০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৯০০ জনে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় ও পশ্চিম আফ্রিকান রুটে অভিবাসনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। পশ্চিম বলকান রুটে ৫৩ শতাংশ, পূর্ব সীমান্তে ৫০ শতাংশ এবং পশ্চিম আফ্রিকান রুটে ৪১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

তবে এখনো সেন্ট্রাল মেডিটেরেনিয়ান রুটই ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসনের সবচেয়ে ব্যস্ত পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের মধ্যে ৩৯ শতাংশই এই রুট ব্যবহার করছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় রুটে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লিবিয়া থেকে গ্রিসের ক্রিট দ্বীপমুখী একটি নতুন করিডোর তৈরি হয়েছে। এটি এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। পাচারকারী নেটওয়ার্কগুলো এখানে নজরদারি কম থাকায় পুরনো রুট ছেড়ে এই নতুন পথ বেছে নিচ্ছে।

পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুটেও অবৈধ অভিবাসনের প্রবণতা বাড়ছে। এই রুটে অভিবাসনের হার ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শুধুমাত্র জুন মাসেই অবৈধ প্রবেশের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আলজেরিয়া থেকে এই পথে যাত্রার হার ৮০ শতাংশ বেড়েছে। এই রুটটি মূলত সোমালিয়া ও অন্যান্য আফ্রিকান দেশের অভিবাসীরা ব্যবহার করছে। ফ্রন্টেক্স এটিকে পাচারকারীদের নতুন কৌশল হিসেবে দেখেছে।

ইংলিশ চ্যানেল রুটেও চাপ বেড়েছে। যুক্তরাজ্যে প্রবেশের জন্য এই রুট ব্যবহার করে অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টা ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ৩৩ হাজার ২০০ জন এই পথে ইংল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। এরা প্রধানত ফ্রান্স হয়ে যাত্রা করেছে।

এই ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ডে সমুদ্রপথে বহু প্রাণহানি ঘটেছে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে অবৈধ অভিবাসনের সংখ্যা কমলেও মানবিক সংকট কমেনি। ফ্রন্টেক্স ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, এই সময়ে ভূমধ্যসাগরে ৭৬০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এসব দুর্ঘটনা ঝুঁকিপূর্ণ ট্রলার যাত্রার সময় ঘটেছে, যেখানে বাংলাদেশিরাও রয়েছেন।

ইউরোপ এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে ফ্রন্টেক্সের প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তা ইউরোপের বিভিন্ন সীমান্তে মোতায়েন রয়েছেন। তবে পাচারকারী চক্র দ্রুত নতুন রুট তৈরি করায় সীমান্ত নজরদারি কঠিন হয়ে পড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত