ঢাকা, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
মিডফোর্ডের ঘটনায় ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) সামনে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা মিডফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচারের দাবি জানান।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহীদ রফিক-জব্বার হল, পরিবহন চত্বরসহ একাধিক সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার বটতলায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগানে যুবদল ও বিএনপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের স্লোগান ছিল- ‘যুবদল খুন করে, ইন্টারিম কী করে’, ‘যুবদল খুন করে, তারেক কী করে’, ‘বিএনপির অনেক গুণ, নয় মাসে দেড়শ খুন’, ‘যেই হাত খুন করে, সেই হাত ভেঙে দাও’, ‘যেই হাত চাঁদা তোলে, সেই হাত ভেঙে দাও’, ‘চাঁদা তোলে পল্টনে, চলে যায় লন্ডনে’ ইত্যাদি।
মিডফোর্ডের ঘটনায় বিক্ষোভ করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সালাম হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। পরে মিছিলটি মালেক হল, খাদিজা হল, জুলাই স্মৃতি হল ঘুরে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে নারী শিক্ষার্থীরাও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগানে অংশ নেন। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়- ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘যুবদলের চাঁদাবাজরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘যুবদলের সন্ত্রাস, রুখে দেবে ছাত্রসমাজ’, ‘আমার ভাই মরলো কেন? তারেক রহমান জবাব দে’, ‘মিটফোর্ডে খুন কেন? বিএনপি জবাব দে’, ‘জালোরে জালো আগুন জ্বালো’ প্রভৃতি।
এদিকে রাত ১১টার দিকে তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। হাজারো সাধারণ শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। ‘চাঁদাবাজদের ঠাঁই এই বাংলায় হবে না’, ‘বিএনপির অনেক গুণ, নয় মাসে দেড় শত খুন’, ‘যুবদলের ঠিকানা বাংলায় হবে না’- ইত্যাদি স্লোগানে মুখর ছিল পুরো মিছিল।
মিছিলটি হোসেন মার্কেট এলাকা ঘুরে আবার মাদ্রাসা চত্বরে ফিরে আসে। প্রায় ৪৫ মিনিট ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরুদ্ধ থাকায় সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়, এতে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এদিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শাহপরাণ হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, চাঁদাবাজ নো মোর’, ‘চাঁদাবাজের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীর ঠাঁই বাংলায় হবে না’-সহ নানান স্লোগান তোলেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, "এদেশে কোনো সন্ত্রাসী বা চাঁদাবাজ সংগঠনকে আমরা আর দেখতে চাই না। ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে।"
রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা কলেজের হল এলাকা থেকেও বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত হয়ে কলেজের প্রধান ফটকে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় ‘দশ মাসে দেড়শ খুন, বিএনপির অনেক গুণ’, ‘আমার ভাই খুন কেন, তারেক রহমান জবাব দাও’, ‘খুনিদের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘পাথর দিয়ে মানুষ মারা-মধ্যযুগীয় বর্বরতা, চলবে না’, ‘খুনিদের দোসররা সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখোরিত হয় পুরো এলাকা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নৃশংসতার রাজনীতি আর বরদাস্ত করা হবে না। এবার ছাত্রসমাজই এর জবাব দেবে।
এদিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ‘জুলাই বিপ্লব মঞ্চ’-এর উদ্যোগে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে অংশ নেয় শতাধিক শিক্ষার্থী।
এছাড়া রাত ১০ টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিজয় ২৪ হল হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে গ্রাউন্ড ফ্লোরে গিয়ে শেষ হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়, "মিটফোর্ডে খুন কেন? তারেক রহমান জবাব দে", "ভোলায় ধর্ষণ কেন? তারেক রহমান জবাব দে", "যুবদলের অনেক গুণ, পাথর মেরে মানুষ খুন", "আমার সোনার বাংলায়, সন্ত্রাসীদের ঠাঁই নাই" সহ বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দেন।
মিডফোর্ডের ঘটনায় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন। রাত সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়৷ এসময় শিক্ষার্থীরা 'টু জিরো টু ফোর , চাঁদাবাজি নো মোর', 'আমার ভাই কবরে, খুনি কেনো বাহিরে', 'চাঁদাবাজের ঠিকানা,এই বাংলায় হবে না','বিচার বিচার বিচার চাই, সোহাগ হত্যার বিচার চাই' সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ইডেন কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- শেয়ারবাজারের পাঁচ কোম্পানিতে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ
- নভেম্বর-ডিসেম্বরে হতে পারে ঢাবির ৫৪তম সমাবর্তন
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে তিন কোম্পানি
- ঢাবি অ্যালামনাইয়ের বৃত্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ১২ কোম্পানি
- প্রথম প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ করেছে পাঁচ কোম্পানি
- ভারতের ২৫০ সেনা নিহত
- ১৭ কোম্পানি শেয়ারে সফল বিনিয়োগ, ২০ শতাংশের বেশি মুনাফা
- হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে, মারা গেলেন ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী
- চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে ভয়াবহ বিপদ, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
- শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতে বিক্রেতা সংকটের নতুন দিগন্ত
- ঢাবির ২০১৮-১৯ সেশনের অছাত্ররা হতে পারবেন না ভোটার-প্রার্থী
- তাসনিম জারার হাফ প্যান্ট পরা ভাইরাল ছবি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য
- শিক্ষার্থীদের আলোকিত ভবিষ্যত গড়তে পাশে থাকবে ঢাবি অ্যালামনাই
- কারো বাবা শেষ সম্বল বিক্রি করেছেন, কারো বাবাই নেই