ঢাকা, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন: কঠোর হচ্ছে নিয়মকানুন

ডুয়া নিউজ- শিক্ষা
২০২৫ জুলাই ১২ ০০:২১:৩৪
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন: কঠোর হচ্ছে নিয়মকানুন

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম আরও শৃঙ্খলিত ও কার্যকরভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন যুগোপযোগী করে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং একাডেমিক মান নিয়ন্ত্রণে একাধিক কঠোর বিধান অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং সংশোধনী খসড়া সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা: দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে। বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে ১১৬টিতে দাঁড়িয়েছে। এত সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১৫ বছর আগের আইনে নিয়মের মধ্যে পরিচালনা করা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। এ কারণেই আইন সংশোধন করা হচ্ছে, যাতে উচ্চশিক্ষার মান বজায় থাকে এবং অনিয়ম রোধ করা যায়। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, আইনের সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান এবং খসড়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

প্রস্তাবিত প্রধান পরিবর্তনসমূহ: স্থায়ী সনদ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ: সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের সাময়িক অনুমতির (সাত বছর) মেয়াদের মধ্যেই স্থায়ী সনদ গ্রহণ করতে হবে। যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই মেয়াদের মধ্যে স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের ভর্তিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রথম সাত বছর এবং নবায়নের পাঁচ বছর, অর্থাৎ মোট ১২ বছরের মধ্যে স্থায়ী সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ব্যাংকে জমার পরিমাণ বৃদ্ধি: বিদ্যমান আইনে প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা, অন্য মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ৩ কোটি এবং অন্য এলাকার জন্য দেড় কোটি টাকা তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখার শর্ত রয়েছে। সংশোধিত আইনে এই টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ৮ কোটি টাকা, অন্য মেট্রোপলিটনের জন্য ৫ কোটি টাকা এবং অন্য এলাকার জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ক্যাম্পাস স্থাপনে জমির বাধ্যবাধকতা: বিদ্যমান আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ১ একর এবং অন্য এলাকার ক্ষেত্রে ২ একর জমি থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। সংশোধিত আইনে যেকোনো এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থাপনের ক্ষেত্রে ৫ একর নিষ্কণ্টক জমি থাকার কথা বলা হয়েছে।

উপাচার্য নিয়োগে কঠোরতা: উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগে আরও কঠোরতা আনার প্রস্তাব করা হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংশোধিত খসড়ায়। বর্তমানে ভিসি নিয়োগের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি ডিগ্রির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছরের শিক্ষকতা ও ২০ বছরের প্রশাসনিক বা গবেষণা অভিজ্ঞতার শর্ত রয়েছে। তবে সংশোধিত খসড়ায় ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেতে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ২০ বছরের শিক্ষকতা অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি, শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণি পেলে কেউ এই পদে নিয়োগের অযোগ্য হবেন। একইসঙ্গে, একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি ভিসি থাকতে পারবেন না। প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগেও শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ভিসি পদ শূন্য হওয়ার অন্তত চার মাস আগে তিনজন যোগ্য প্রার্থীর নাম সরকারের কাছে জমা দেওয়ার বিধানও খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধের বিধান: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, সংশোধিত আইনের প্রস্তাবে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি নির্ধারিত ও কার্যকর কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আইন লঙ্ঘনে কঠোর দণ্ড: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন না মানলে শাস্তির মাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। সংশোধন প্রস্তাবে কোনো ব্যক্তি আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিদ্যমান আইনে এই জরিমানার পরিমাণ ছিল ১০ লাখ টাকা।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত