ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

৫৫ কোটি টাকা ঋণখেলাপি হামিদ ফেব্রিক্স, মালিকদের আদালতে তলব

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ জুন ১৮ ২৩:২২:১৪
৫৫ কোটি টাকা ঋণখেলাপি হামিদ ফেব্রিক্স, মালিকদের আদালতে তলব

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হামিদ ফেব্রিক্স লিমিটেডের মালিকদের তলব করেছে অর্থঋণ আদালত। ব্যাংক এশিয়া থেকে নেওয়া ৫৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বকেয়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক এশিয়া এর আগে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কয়েকজন পরিচালকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করেছিল। ব্যাংকটি বকেয়া আদায়ের জন্য কোম্পানিটির সম্পদ নিলামে তোলার পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছিল।

আদালত সংবাদপত্রের মাধ্যমে আসামিদের কাছে সমন জারি করে এবং নির্দেশ দেয়, তারা যেন ১৭ জুনের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে অথবা মনোনীত আইনজীবীর মাধ্যমে ঢাকার দ্বিতীয় অর্থঋণ আদালতে লিখিত বিবৃতি জমা দেন। তবে আসামিরা আদালতে হাজির হয়েছিলেন কিনা বা কোনো লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে হামিদ ফেব্রিক্সের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা আদালতের সমন সম্পর্কে অবগত নন। তবে তিনি স্বীকার করেন, ব্যাংকের কাছে কোম্পানিটির ঋণ রয়েছে এবং তারা বকেয়া পরিশোধের চেষ্টা করছে।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত সমন নোটিশে আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, হামিদ ফেব্রিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ; পরিচালক এএইচএম মোজাম্মেল হক ; পরিচালক সালিনা মাহমুদ; পরিচালক নুসরাত মাহমুদ; নাবিলা মাহমুদ এবং ফারহানা ড্যানিশ। নোটিশে বলা হয়েছে, যদি আসামিরা ১৭ জুনের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত না হন বা মনোনীত আইনজীবীর মাধ্যমে ঢাকার দ্বিতীয় অর্থঋণ আদালতে লিখিত বিবৃতি জমা না দেন, তবে অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর বিধান অনুযায়ী মামলা তাদের বিরুদ্ধে নিষ্পত্তি করা হবে।

গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংক এশিয়া বকেয়া ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে মাহিন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হামিদ ফেব্রিক্সের সম্পদ নিলামে বিক্রির ঘোষণা দেয়। সে সময় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে নরসিংদীতে অবস্থিত হামিদ ফেব্রিক্সের ২৯৬.৫০ শতাংশ জমি, কারখানার ভবন এবং যন্ত্রপাতি নিলামে বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে দরপত্র চাওয়া হয়েছিল।

হামিদ ফেব্রিক্সের কারখানায় তিনটি উৎপাদন ইউনিট রয়েছে। এর ওভেন ফ্যাব্রিক ইউনিটের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩২৪০ মিলিয়ন গজ, উইভিং ইউনিটের বার্ষিক ক্ষমতা ৯৮৮ মিলিয়ন গজ এবং ডাইং ইউনিটের প্রায় ১৩.৭ মিলিয়ন কেজি সুতা উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে।

২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া হামিদ ফেব্রিক্স ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লোকসান করেছে, যেখানে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৪ টাকা ৬ পয়সা। এই লোকসানের কারণে কোম্পানিটি ওই বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। এছাড়াও, কোম্পানিটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে এটিকে 'জেড' ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।

লোকসানের ধারা ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) কোম্পানিটি ২৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে, যেখানে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ২ টাকা ৮৬ পয়সা। টেক্সটাইল কোম্পানিটি এখনও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নয় মাসের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

হামিদ ফেব্রিক্স শেয়ার ইস্যু করে শেয়ারবাজার থেকে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল, যেখানে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ছিল ৩৫ টাকা (২৫ টাকা প্রিমিয়াম সহ)। এর মধ্যে ৩০ কোটি টাকা জনসাধারণের তহবিল থেকে ঋণ পরিশোধে এবং ৭২ কোটি টাকা ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যয় করা হয়েছিল।

আজ বুধবার (১৮ জুন) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে হামিদ ফেব্রিক্সের শেয়ারের প্রতিটি শেয়ার ৭ টাকা ৮০ পয়সায় ক্লোজিং হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত