ঢাকা, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২

শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক মুনাফা চান? জেনে নিন ৫ মন্ত্র

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ১৪:৪২:৪৪

শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক মুনাফা চান? জেনে নিন ৫ মন্ত্র

বিশেষ প্রতিবেদন: শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ মানেই শুধু ভাগ্যের ওপর ভরসা নয়—এটি মূলত এক ধরনের পরিকল্পিত খেলা, যেখানে কৌশল, বিশ্লেষণ ও ধৈর্যের সমন্বয় জরুরি। নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকে প্রথম দিকে বাজারের ওঠানামা দেখে ভয় পান, আবার কেউ কেউ দ্রুত লাভের আশায় অযথা ঝুঁকি নেন। কিন্তু প্রকৃত সফল বিনিয়োগকারীরা জানেন—দীর্ঘমেয়াদি মুনাফার চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে পাঁচটি সহজ কিন্তু কার্যকর নীতির উপর। যেগুলো হলো:—

১. পরিকল্পিত বিনিয়োগ

শেয়ারবাজারের প্রথম শর্ত হলো সুসংগঠিত বিনিয়োগ পরিকল্পনা। কত টাকা বিনিয়োগ করবেন, কোন খাতে বিনিয়োগ করবেন এবং কতদিনের জন্য বিনিয়োগ করবেন—এসব আগে থেকেই নির্ধারণ করা উচিত। যেমন, ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে চাইলে তার একটি অংশ স্থিতিশীল ব্লু-চিপ শেয়ারে, একটি অংশ সম্ভাবনাময় নতুন খাতে এবং বাকি অংশ ক্যশ রাখা নিরাপদ। যাতে কোন অংশের দাম পড়ে গেলে সমন্বয় করা যায়।

২. বাজার বিশ্লেষণ

শেয়ারবাজার সবসময় ঢেউয়ের মতো ওঠানামা করে। তাই টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (বিভিন্ন চার্ট, ভলিউম, মুভিং এভারেজ) এবং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ (কোম্পানির আয়, ঋণ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা) দুই দিকই জরুরি। এভাবে বিনিয়োগকারীরা কখন শেয়ার কেনা বা বিক্রি করলে লাভবান হবেন তা আগেই আন্দাজ করতে পারেন। সঠিক বিশ্লেষণ বিনিয়োগকারীদের অযথা আতঙ্ক এড়াতে সাহায্য করে এবং হঠকারী সিদ্ধান্তের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে আনে।

৩. বৈচিত্র্য বজায় রাখা

সব টাকা এক জায়গায় বিনিয়োগ নয়—এটাই সফল বিনিয়োগকারীদের নীতি। ব্যাংকিং, উৎপাদন, প্রযুক্তি, জ্বালানি বা রিয়েল এস্টেট—বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ছড়িয়ে দিলে একটি খাতের ক্ষতি অন্য খাত দিয়ে পূরণ হয়ে যায়। ফলে ঝুঁকি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকে।

অনেকেই প্রথম কয়েক দিনের ওঠানামায় আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন। অথচ ধৈর্য ধরে রাখলে দীর্ঘমেয়াদে অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ার বিপুল মুনাফা দিয়েছে। তাই ক্ষণস্থায়ী ওঠানামার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, শেয়ারবাজারে ধৈর্যশীল বিনিয়োগকারীরাই শেষ পর্যন্ত আসল বিজয়ী হন, কারণ সময়ই প্রকৃত মুনাফার মূল্য প্রকাশ করে।

৫. নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ

বাজারের প্রতিটি খবর নজরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। সরকারী নীতি পরিবর্তন, কর আরোপ, কোম্পানির বার্ষিক রিপোর্ট কিংবা শিল্পখাতের যেকোনো আপডেট—সবকিছুই শেয়ারের দামে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে। যারা তথ্য সচেতন, তারাই ঝুঁকি কমিয়ে লাভ তুলতে পারেন। শুধু তাই নয়, সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য জানা থাকলে বাজারের বড় ধরনের পরিবর্তনের আগেই কৌশল ঠিক করে নেওয়া সম্ভব হয়, যা অন্যদের তুলনায় বাড়তি সুবিধা এনে দেয়।

উপসংহার

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা সবসময় বলেন—শেয়ারবাজারে ভাগ্য নয়, বরং পরিকল্পনা, বিশ্লেষণ ও ধৈর্যই আসল মূলধন। উপরোক্ত পাঁচটি মন্ত্র অনুসরণ করলে বিনিয়োগকারীরা শুধু অল্প দিনের জন্য নয়, বরং দীর্ঘ মেয়াদে ধারাবাহিক মুনাফার পথে এগোতে পারবেন। সঠিক কৌশল মেনে চললে বাজারের ওঠানামা আর ভয়ের জায়গা থাকে না, বরং তা হয়ে ওঠে সুযোগ কাজে লাগানোর সোপান। শেষ পর্যন্ত, জ্ঞান ও শৃঙ্খলাই একজন বিনিয়োগকারীকে সফলতার আসনে পৌঁছে দেয়।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত