ঢাকা, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২

ছয় বছর পর যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়াল নরওয়ে

২০২৫ ডিসেম্বর ২৯ ২০:৩৬:১০

ছয় বছর পর যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়াল নরওয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বের বৃহত্তম সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিল নরওয়ের সরকারি পেনশন ফান্ড দীর্ঘ ছয় বছর পর বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তাদের বিনিয়োগ অবস্থানে সামান্য হলেও ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। একাধিক বড় কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করলেও সামগ্রিকভাবে বাজারে তাদের মোট বিনিয়োগ বেড়েছে, যা বিদেশি বিনিয়োগের দিক থেকে আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নরজেস ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে বাংলাদেশে নরওয়ের এই তহবিলের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। আগের বছর একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১৪ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে তাদের বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই বিনিয়োগ বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে তহবিলটির কৌশলগত পোর্টফোলিও পুনর্বিন্যাস। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ব্র্যাক ব্যাংকে ৫ শতাংশ শেয়ার অপরিবর্তিত রাখার পাশাপাশি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে তাদের অংশীদারিত্ব বাড়িয়ে ২ দশমিক ৩৮ শতাংশে উন্নীত করেছে নরওয়ের ফান্ড। একই সঙ্গে সিটি ব্যাংক ও এমজেএল বাংলাদেশে অবস্থান শক্তিশালী করা হয়েছে এবং প্রাইম ব্যাংকে শেয়ারের পরিমাণ বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৮৮ শতাংশে নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ভোগ্যপণ্য খাতের মারিকো বাংলাদেশে নতুন করে বিনিয়োগ শুরু করেছে তহবিলটি। অন্যদিকে গ্রামীণফোন, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজে তাদের বিনিয়োগ স্থিতিশীল রাখা হয়েছে।

তবে ইতিবাচক এই চিত্রের বিপরীতে কিছু বড় কোম্পানি থেকে সম্পূর্ণভাবে বিনিয়োগ প্রত্যাহারও করেছে নরওয়ের এই ফান্ড। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এবং সিঙ্গার বাংলাদেশ থেকে পুরোপুরি সরে গেছে তারা। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বেক্সিমকো ফার্মার ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের গ্রেপ্তারের পর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন নিয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতা ও করপোরেট সুশাসনের ঘাটতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

অন্যদিকে, সিঙ্গার বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের পেছনে কোম্পানিটির উচ্চ ঋণের চাপ এবং তীব্র স্থানীয় প্রতিযোগিতায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে না পারাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব ঝুঁকি বিদেশি ফান্ডগুলোর সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামগ্রিক বিদেশি বিনিয়োগ যখন নিম্নমুখী, তখন নরওয়ের মতো বড় ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীর অবস্থান বৃদ্ধি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা। তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, বড় মূলধনী ও উচ্চ মানসম্পন্ন শেয়ারের সীমাবদ্ধতা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যকরণে বাধা সৃষ্টি করছে। তবুও মুনাফা পুনরায় দেশের বাজারে বিনিয়োগ করার এই প্রবণতাকে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

জুয়েল/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত