ঢাকা, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২

করোনার পর তরুণদের হৃদ্‌রোগ ঝুঁকি বাড়ছে কেন?

২০২৫ ডিসেম্বর ২৮ ২২:৫৬:০১

করোনার পর তরুণদের হৃদ্‌রোগ ঝুঁকি বাড়ছে কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনিয়মিত জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসের অবনতি ও বাড়তে থাকা মানসিক চাপের প্রভাবে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি এখন আর নির্দিষ্ট বয়সে সীমাবদ্ধ নেই। দিনের যে কোনো সময়েই হৃদ্‌পিণ্ডজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাকালের পর মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

বর্তমানে হৃদ্‌রোগে আক্রান্তদের মধ্যে বয়সের কোনো স্পষ্ট সীমারেখা দেখা যাচ্ছে না। সব বয়সী মানুষের পাশাপাশি কম বয়সি প্রাপ্তবয়স্ক বা ইয়ং অ্যাডাল্টদের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রেই বংশগত ইতিহাস কিংবা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ধূমপানের মতো প্রচলিত ঝুঁকি না থাকলেও এই জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

এই বাস্তবতায় ভারতের কর্নাটকের বেঙ্গালুরুর শ্রী জয়দেব ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়োভাস্কুলার সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের নিয়ে ‘প্রিম্যাচিওর হার্ট অ্যাটাক স্টাডি’ পরিচালনা করে। গবেষণার অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে উঠে আসে, করোনা মহামারির আগেই তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছিল।

গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ২০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ধূমপানের মতো কোনো পরিচিত ঝুঁকিই ছিল না। আরও তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হলো, মোট হার্ট অ্যাটাক রোগীর প্রায় ৮ শতাংশ ছিলেন তরুণী ও যুবতী। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত সবাই কোনো না কোনো সময় ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তরুণীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক বাড়ার কারণ

হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সিএন মঞ্জুনাথ বলেন, কম বয়সি নারী রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি চিকিৎসকদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। দুই-তিন দশক আগেও এমন প্রবণতা খুব একটা দেখা যেত না। তার মতে, পারিবারিক ইতিহাসের পাশাপাশি জীবনযাত্রার বড় ধরনের পরিবর্তন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সাধারণভাবে মেনোপজের আগে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন হৃদ্‌রোগের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রাকৃতিক সুরক্ষা দেয়। ফলে কম বয়সে নারীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তবে অনিয়মিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে সেই সুরক্ষা এখন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।

লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব

প্রবীণ কার্ডিয়োলজিস্ট ডা. ধীমান কাহালি জানান, ধূমপান, মদ্যপান ও অনিয়মিত দৈনন্দিন অভ্যাসের কারণে পুরুষ ও নারীর মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির পার্থক্য দ্রুত ঘুচে আসছে। এতে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা অকাল হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে, এই উপমহাদেশের নারীদের মধ্যে জিনগত ও খাদ্যাভ্যাসগত কারণে ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধির প্রবণতা তুলনামূলক বেশি। অতিরিক্ত ময়দা, ভাজাপোড়া ও ফাস্টফুড গ্রহণ এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি শীতকালে রক্তনালি সংকুচিত হওয়ার কারণে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার, সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাকে হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায় হিসেবে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা। বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভূত হলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

চিকিৎসকদের মতে, সচেতনতা বাড়ানো এবং জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনাই তরুণ বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর ও টেকসই পথ।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত