ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২
তলানিতে বিদ্যুৎ খাতের তিন কোম্পানি, বিনিয়োগকারীদের মাথায় হাত

হাসান মাহমুদ ফারাবী: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের তিন কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে দর কমে তলানির পথে যাত্রা করেছে। কোম্পানিগুলো হলো- বারাকা পাওয়ার, বিডি ওয়েল্ডিং এবং জিবিবি পাওয়ার। রিজার্ভ থাকা সত্বেও ধারাবাহিকভাবে দর কমছে এই তিন কোম্পানির। ইতিমধ্যে কোম্পানি তিনটি ফেসভ্যালুর নিচে নেমে গেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জিবিবি পাওয়ার
কোম্পানি তিনটির মধ্যে সবচেয়ে কম দরে লেনদেন হচ্ছে জিবিবি পাওয়ারের। সর্বশেষ আজ (০৭ অক্টোবর) কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন দর ছিল ৬ টাকা ৬০ পয়সা। গত এক মাসের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ছিল ৮ টাকা। আর এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম ছিল ৮ টাকা ৮০ পয়সা।
২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ২০০ কোটি টাকা এবং ১০১ কোটি ৮০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ১৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
কোম্পানিটি ২০২৪ অর্থবছরের বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ অর্থবছরে কোম্পানিটি ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।
কোম্পানিটি গত অর্থবছরে প্রকাশিত অনিরিক্ষীত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী. প্রথম প্রান্তিকে ৪ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২ পয়সা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৪ পয়সা শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস দেখিয়েছে। তিন প্রান্তিক মিলিয়ে বা ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছে ১০ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৬২ পয়সা। সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ২২ পয়সা।
কোম্পানিটির ১০ কোটি ১৮ লাখ ৩ হাজার ৫৪৮টি শেয়ারের মধ্যে ৩২.০১ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১২.৭৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ৫৬.২০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
বারাকা পাওয়ার
দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরে লেনদেন হয়েছে বারাকা পাওয়ারের শেয়ার। আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩ পয়সা বা ৩.৫৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ২০ পয়সায়, যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত ৮ সেপ্টেম্বর এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দর ছিল ১২ টাকা ৩০ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে দর কমে গত ২২ সেপ্টেম্বর ফেসভ্যালুর নিচে নেমে এসেছে। ওইদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর থেকেই কোম্পানিটির দর ধারাবাহিকভাবে কমছে।
২০১১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ৪০০ কোটি টাকা এবং ২৩৫ কোটি ৪৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ২০০ কোটি ৮ লাখ টাকা।
কোম্পানিটি ২০২৪ অর্থবছরের বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।
কোম্পানিটি গত অর্থবছরে প্রকাশিত অনিরিক্ষীত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী. প্রথম প্রান্তিকে ১২ পয়সা আয় দেখালেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৯ পয়সা শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিযেছে। তবে কোম্পানিটি তৃতীয় প্রান্তিকে ২৬ পয়সা শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস দেখিয়েছে। তিন প্রান্তিক মিলিয়ে বা ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছে ২৯ পয়সা। সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ২৬ পয়সা।
কোম্পানিটির ২৩ কোটি ৫৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬১টি শেয়ারের মধ্যে ৩০ উদ্যোক্তা পরিচালক, ২৪.৭৬ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ৪৫.২৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
বিডি ওয়েল্ডিং
এদিকে গত এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন দরে নেমে এসেছে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ার দর। আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১০ পয়সা বা ১.০৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৫০ পয়সায়, যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বনিম। গত এক মাসের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ছিল গত ৮ সেপ্টেম্বর। ওইদিন শেয়ারটির দর ছিল ১০ টাকা ১০ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে দর কমে ১০ সেপ্টেম্বর ফেসভ্যালুর নিচে নেমে আসে কোম্পানিটির শেয়ার দর। ওইদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ৯ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়ায়। ১১ সেপ্টেম্বরের পর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দর একটানা কমছে। মাঝে মাঝে বাড়লেও ফেসভ্যালু অতিক্রম করতে পারেনি।
১৯৯৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ৫০ কোটি টাকা এবং ৪৩ কোটি ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
কোম্পানিটি ২০২৪ অর্থবছরের বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটি ১ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।
দীর্ঘদিন ধরেই কোম্পানিটির কোনো প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছেনা।
কোম্পানিটির ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩০৫টি শেয়ারের মধ্যে ৩১.০১ উদ্যোক্তা পরিচালক, ২.৮৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ০.৭২ শতাংশ বিদেশি এবং ৬৫.৩৯ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
জুন মাসে এই ৩ কোম্পানির আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। যে কোনো দিন কোম্পানিগুলো ডিভিডেন্ড বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোম্পানিগুলো ইচ্ছে করলে আয় না থাকলেও রিজার্ভ থেকে ডিভিডেন্ড দিতে পারে। কিন্তু কোম্পানি ৩টির সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ডিভিডেন্ড পাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। আবার যেভাবে কোম্পানিগুলোর দর ধারাবাহিকভাবে কমে তলানিতে নেমে যাচ্ছে তাতে পুঁজি ফেরত পাওয়া নিয়েও আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা।
এএসএম/
শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান, সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে শেয়ারবাজারের ৮ কোম্পানি
- ‘জেড’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি
- আফগানিস্তান বনাম বাংলাদেশ, সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- নয় কোম্পানির শেয়ারে মুভিং এভারেজ,ম্যাকডি, এঙ্গালফিং বাই সিগনাল
- ডুবছে ওষুধের দুই কোম্পানি, বিনিয়োকারীদের কপালে চিন্তার ভাজ
- শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিএসইসি চেয়ারম্যানের যুগান্তকারী ঘোষণা
- RSI এলার্ট: ১০ শেয়ারে বিপদ সংকেত
- সাত কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির গন্ধ!
- শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস
- মশিউর সিকিউরিটিজের গ্রাহকদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- জেডে নেমে তিন শেয়ারের ধস, বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব হওয়ার শঙ্কা
- উৎপাদন বন্ধ চার কোম্পানির শেয়ার নিয়ে সতর্কতা জারি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে ২ কোম্পানি
- শেয়ারবাজার নিয়ে অর্থনীতির দুই শীর্ষ নেতার কড়া সমালোচনা