ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২
সাবমেরিন কেবলসের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর অসামঞ্জস্যতা

আবু তাহের নয়ন:
সিনিয়র রিপোর্টার

আবু তাহের নয়ন:শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি)-এর ৩০ জুন, ২০২৫ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর অসামঞ্জস্যতা খুঁজে পেয়েছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। নিরীক্ষকের দেওয়া 'কোয়ালিফাইড ওপিনিয়ন' (Qualified Opinion) এবং 'এমফাসিস অব ম্যাটার' (Emphasis of Matter) প্যারাগ্রাফে সরকারি ইক্যুইটি মানি মূলধনে রূপান্তরে ব্যর্থতা এবং ভ্যাট সংক্রান্ত হিসাবের গরমিল তুলে ধরা হয়েছে।
মূলধনে রূপান্তর হয়নি ১,৫২২ কোটি টাকা সরকারি ইক্যুইটি
নিরীক্ষক তাদের 'বেসিস ফর কোয়ালিফাইড ওপিনিয়ন' অংশে উল্লেখ করেছে যে, বিএসসিপিএলসি বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ প্রকল্পের (যেমন SMW5 এবং SMW6) জন্য সরকারের কাছ থেকে ১ হাজার ৫২২ কোটি ৩৬ লাখ ৮১ হাজার ৫ টাকা 'ইক্যুইটি মানি' হিসেবে গ্রহণ করেছে।
ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (FRC)-এর ২০২০ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিট (Share Money Deposit) প্রাপ্তির ছয় মাসের মধ্যে শেয়ার মূলধনে রূপান্তরিত হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসি-এর চূড়ান্ত অনুমোদন সত্ত্বেও, ১ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা মূলধনে রূপান্তরিত হলেও বাকি ১ হাজার ৫২২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত শেয়ার মূলধনে রূপান্তরিত হয়নি।
এরফলে কোম্পানিটি এই বিশাল অঙ্কের অর্থকে শেয়ার মূলধন হিসেবে দেখানোর পরিবর্তে এখনও "সরকার থেকে প্রাপ্ত ইক্যুইটি মানি" হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করে যাচ্ছে। এটি FRC প্রজ্ঞাপনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আর্থিক প্রতিবেদনে ইকুইটির উপস্থাপনাকে প্রভাবিত করেছে।
ভ্যাট সংক্রান্ত হিসাবে বড় গরমিল
নিরীক্ষক ভ্যাট পরিশোধ এবং গ্রহণ সংক্রান্ত হিসাবে একাধিক অসামঞ্জস্য খুঁজে পেয়েছে —
ভ্যাট ব্যালেন্সের গরমিল: কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে অগ্রিম ভ্যাট হিসেবে ৮৯ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩০ টাকা দেখানো হলেও, একই সময়ের ভ্যাট রিটার্নে ৩৬ লাখ ৩২ হাজার ৭১৪৮ টাকা নেট ভ্যাট পরিশোধযোগ্য দেখানো হয়েছে। এই বিশাল গরমিলের কোনো সমন্বয় করা হয়নি।
বিটিসিএল থেকে প্রাপ্য সুদ: কোম্পানিটি ভ্যাট অডিটের কারণে বিলম্বিত ভ্যাট পরিশোধের জন্য সরকার থেকে চাপ সৃষ্টি হওয়ায় ১২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ভ্যাট সুদ পরিশোধ করে। তবে বিএসসিপিএলসি পুরো অর্থটি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর কাছ থেকে প্রাপ্য হিসেবে রেকর্ড করে।
নিরীক্ষক জানিয়েছে, বিটিসিএল-এর কাছ থেকে লিখিতভাবে ঋণ বা দায় স্বীকার না করিয়ে কেবল একটি চিঠির ভিত্তিতে এই ১২ কোটি ৪১ লাখ টাকা প্রাপ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিটিসিএল-এর নিশ্চিতকরণ ছাড়া, এই সুদজনিত দায় যথাযথভাবে বিটিসিএল-এর কাছে স্থানান্তরিত হয়নি। নিরীক্ষকের মতে, যদি এই অর্থ প্রাপ্য হিসেবে না দেখিয়ে খরচ হিসেবে দেখানো হতো, তবে কোম্পানির মোট ক্ষতি ১২ কোটি ৪১ লাখ টাকা আরও বেশি হতো।
এই কোয়ালিফাইড ওপিনিয়ন ইঙ্গিত দেয় যে বিএসসিপিএলসি-এর আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আন্তর্জাতিক হিসাব মান (IFRS) এবং দেশের আইনি বিধিবিধান মেনে উপস্থাপিত হয়নি।
এএসএম/
শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- এশিয়া কাপ ২০২৫: বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান,সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- নতুন দিগন্তে বেক্সিমকো, শেয়ারবাজারে আশার আলো
- দুই বছরের ডিভিডেন্ড পেল তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে শেয়ারবাজারের ৮ কোম্পানি
- বিএসইসি-ডিএসই’র নাকের ডগায় লোকসানি শেয়ার নিয়ে কারসাজি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৬ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ইবনে সিনা ফার্মা
- চূড়ান্ত অনুমোদনের পথে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- দু্ই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- ১৪ প্রতিষ্ঠান রদবদলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা অন্ধকারে, বাড়ছে আতঙ্ক
- শেয়ারবাজার নিয়ে অর্থনীতির দুই শীর্ষ নেতার কড়া সমালোচনা
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিনিয়োগ বেড়েছে ৪ কোম্পানিতে
- মুনাফা কমেছে জুতাশিল্পের দুই জায়ান্টের
- আর্থিক চাপ কাটাতে ভবন বিক্রি করছে শেয়ারবাজারের দুই প্রতিষ্ঠান