ঢাকা, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন প্রাইমারির চেয়েও কম!
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবদান রাখলেও, সেখানে কর্মরত শিক্ষকরা আর্থিক দিক থেকে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছেন। অপ্রত্যাশিত হলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চেয়ে কম। এ ধরনের বৈষম্য শুধু আর্থিক নয়, বরং উচ্চশিক্ষার মূল্যায়ন ও শিক্ষকের মর্যাদা নেমে আসারও ইঙ্গিত দেয়।
উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা, গবেষণায় নিয়োগ এবং শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকরা যদি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকের সমান বা কম বেতন পান, তবে এটি শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
জানা গেছে, দেশের ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারারদের মাসিক বেতন মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। উদাহরণ হিসেবে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে একজন লেকচারারের মাসিক বেতন মাত্র ১২–২০ হাজার টাকা।
তুলনামূলকভাবে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গ্রেড-১৩ অনুযায়ী মাসিক ১৪ হাজার ৫৩৯ টাকা মূল বেতন পান। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা এবং বার্ষিক ইনক্রিমেন্টসহ তাদের মোট আয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তুলনায় অনেক বেশি।
দেশের প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষকদের জন্য অনেক বেশি সম্মানজনক বেতন কাঠামো অনুসরণ করছে। সেখানে একজন লেকচারারের বেতন ৪০–৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এটি প্রমাণ করে পর্যাপ্ত তহবিল থাকলে শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন দেওয়া সম্ভব। তবে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও এই মান অনুসরণ করছে না।
বেতন বৈষম্যের মূল কারণ হলো দুর্বল নিয়ন্ত্রণ এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নীতিমালা যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে, ফলে তারা নিজেরাই বেতন ও সুবিধা নির্ধারণ করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, শিক্ষাকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে দেখা হয়, যেখানে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে মুনাফা বৃদ্ধি করা হয়।
বেতন কাঠামো নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, “আমরা যে অর্থ পাই তা দিয়ে খাওয়া-পরার খরচও জোগানো যায় না। বাসা-ভাড়া দিতে পারি না, মেসেই জীবন চালাই। সবসময় মানসিক চাপ থাকে, যার ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ানো প্রভাবিত হয়।”
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লেকচারার বলেন, “মাস্টার্সের পর এমফিল করেছি। মাসে হাতে পাই মাত্র ২৪ হাজার টাকা। সরকারি চাকরির মতো কোনো নিরাপত্তা নেই। চাকরিটা টিকবে কিনা তা সবসময় অজানা।”
অন্য এক শিক্ষক যোগ করেন, “এমবিএ শেষে শিক্ষকতায় এসেছি, মাসে ২৫ হাজার টাকা পাই। অথচ প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষক ৩২ হাজার টাকা পাচ্ছে। এটি লজ্জাজনক ও মনোবলহীন করার মতো।”
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, উচ্চশিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষকদের বেতন যদি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকের চেয়ে কম হয়, তাহলে তা শিক্ষার অবমূল্যায়ন ছাড়া কিছু নয়। পর্যাপ্ত বেতন না দিলে গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়, যার ফলে শিক্ষার মান কমে যায় এবং উচ্চশিক্ষা খাত আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় পিছিয়ে পড়ে।
চাকরির অনিশ্চয়তা ও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে শিক্ষকেরা বিদেশমুখী হয়ে যাচ্ছেন। ইউরোপ, কানাডা, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক কম যোগ্যতা হলেও বেশি বেতন ও সুযোগ সুবিধা থাকায় তারা দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন।
শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন সময় এসেছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ন্যূনতম বেতন কাঠামো নির্ধারণের। সরকারি প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকের বেতন প্রায় ২০–২৫ হাজার টাকা, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া উচিত। ন্যায্য বেতন ও চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে দেশের উচ্চশিক্ষা ও ভবিষ্যত বিপন্ন হবে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: খেলাটি মোবাইলে সরাসরি(LIVE) দেখুন
- ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: খেলাটি ফ্রিতে সরাসরি(LIVE) দেখুন
- আজ বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় টি-টোয়েন্টি: যেভাবে দেখবেন লাইভ (LIVE)
- ডিএসই’র দুই ব্রোকারেজের ট্রেডিং লাইসেন্স বাতিল
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৯৫ কোম্পানি, দেখুন এক নজরে
- বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় টি-২০: কবে, কখন, কোথায়-যেভাবে দেখবেন খেলাটি
- আজ বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ: কখন, কোথায়-যেভাবে দেখবেন সরাসরি(LIVE)
- ইপিএস প্রকাশ করেছে ৬৮ কোম্পানি, দেখুন এক নজরে
- মার্জিন রুল থেকে মিউচুয়াল ফান্ড—সবখানেই আসছে বড় পরিবর্তন
- দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম পাকিস্তান, খেলাটি সরাসরি(LIVE) দেখুন
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে অগ্নী সিস্টেমস
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে তালিকাভুক্ত২৪ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে সিমটেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজ
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে জেএমআই হসপিটাল
- নেগেটিভ ইকুইটি মুক্ত করতে মার্জিন ঋণে তালা মারছে বিএসইসি