ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২
বিসিএসের আদলে হবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ

দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসছে। এখন থেকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে নয় বরং বিসিএসের মতো সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এ প্রক্রিয়ায় দুটি ধাপ থাকবে—প্রাথমিক (বাছাই) পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা।
এই নতুন নিয়োগব্যবস্থা চালুর জন্য ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা ২০২৫’ খসড়া আকারে প্রস্তুত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর খসড়াটি বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনাধীন রয়েছে। অনুমোদন শেষে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে আশা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৮ হাজার বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ২৯ হাজার ১৬৪টি এমপিওভুক্ত যেখানে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত।
এখন পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিবন্ধন সনদ নিতে হয়। এই পরীক্ষা ও সনদ প্রদানের দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। নিবন্ধন সনদপ্রাপ্তদের নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ প্রদান করে।
২০০৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রদান শুরু করে। প্রথম ১০ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগক্ষমতা ছিল গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে। তবে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে এনটিআরসিএ সনদ প্রদানের পাশাপাশি নিয়োগ সুপারিশ করার ক্ষমতাও পায়। এরপর পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছে কর্তৃপক্ষ। চলতি সপ্তাহেই ষষ্ঠ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সুপারিশ প্রকাশ হতে পারে। এ পর্যন্ত ১৮টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
নতুন বিধিমালা তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বিধিমালাটি জারি করা হলে শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তখন শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এতে নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা কমবে। কবে নাগাদ এটি কার্যকর হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিধিমালা জারি হলে পরবর্তী নিয়োগ পরীক্ষাই নতুন পদ্ধতিতে নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএর একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন পদ্ধতি হবে অনেকটা বিসিএসের নিয়োগ পদ্ধতির আদলে। অর্থাৎ বিসিএসের মতো শূন্য পদ উল্লেখ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। এরপর আবেদনকারীদের আবেদনপ্রক্রিয়া শেষে নেওয়া হবে নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষা। নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে। এরপর প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ফল। পুরো প্রক্রিয়াটি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা ও মামলা-সংক্রান্ত জটিলতা কমে আসবে। তাঁরা জানান, নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে (লিখিত নাকি এমসিকিউ) হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে পরিকল্পনা রয়েছে, বিশেষ বিসিএসের পরীক্ষা পদ্ধতির আদলে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার। অবশ্য এ বিষয়ে বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষার বিষয়, ব্যাপ্তি ও নম্বর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হবে।’
বর্তমানে শূন্য পদ উল্লেখ করে বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরপর আবেদনপ্রক্রিয়া শেষে তিন ধাপে (প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক) পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে পিএসসি। তবে বিশেষ বিসিএসের ক্ষেত্রে ২০০ নম্বরের এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষার পর দ্বিতীয় ধাপে ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়।
নতুন পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি ঠিক করতে অংশীজনদের নিয়ে এক বা একাধিক কর্মশালার আয়োজন করা হবে। এরপর সবার মতামতের ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি, নম্বরসহ অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করা হবে।
বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা হবে দুই ধাপে। এর একটি নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষা, অন্যটি মৌখিক পরীক্ষা। নির্বাচনী পরীক্ষায় শূন্য পদের বিপরীতে দ্বিগুণ প্রার্থীকে বিষয় ও পদের ভিত্তিতে উত্তীর্ণ করা হবে। অর্থাৎ শূন্য পদের সংখ্যা ৫০ হাজার হলে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন ১ লাখ প্রার্থী। নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। উভয় অংশে (নির্বাচনী ও মৌখিক) পাস নম্বর হবে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ। মৌখিক পরীক্ষা শেষে প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ফলাফল। চূড়ান্ত ফলাফলে বিষয় ও পদভিত্তিক শূন্য পদের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ প্রার্থীকে পাস করানো হবে। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর তিন বছরমেয়াদি সনদপত্র পাবেন প্রার্থীরা। তবে চূড়ান্ত মেধাক্রম তৈরি হবে শুধু নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখে আবেদনকারীর বয়স সরকারনির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে হতে হবে। বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর। খসড়ায় ফেব্রুয়ারির মধ্যে অথবা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সময়ে শূন্য পদের তথ্য এনটিআরসিএ-তে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের বিধিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে বিধিটি আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে বিধিটি জারি করা হবে।’
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- হলে ঢাবি ছাত্রীর হঠাৎ অসুস্থতা, হাসপাতালে মৃত্যু
- মার্জিন ঋণে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে না
- ‘পদত্যাগ করতে পারেন ড. ইউনূস’
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে পাঁচ শেয়ার
- শেয়ারবাজারের ৬ ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফা, ৫ ব্যাংকের লোকসান
- ঢাবির হলে 'গাঁ’জার আসর', চার শিক্ষার্থীকে আটক
- ১২ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৯ খবর
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব: ফের অস্থির শেয়ারবাজার
- বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘লাল তালিকা’য় ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠান
- দুই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- ভালুকায় প্রথম পাঁচতারা হোটেল চালু করছে বেস্ট হোল্ডিংস
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কিনছে আরব আমিরাতের কোম্পানি
- বেক্সিমকো-বেক্সিমকো ফার্মাসহ চার ব্যক্তি-এক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা-সতর্ক
- বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের নতুন কমিটির অভিষেক শনিবার