ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২

বিশ্বসেরা ৫০ নারী নেত্রীর তালিকায় জবি শিক্ষার্থী শিফা

ডুয়া নিউজ- শিক্ষা
২০২৫ আগস্ট ১৮ ০৫:৫৯:১৩
বিশ্বসেরা ৫০ নারী নেত্রীর তালিকায় জবি শিক্ষার্থী শিফা

বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী সাবিতা বিনতে আজাদ শিফা। তাকে সম্মানিত করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন ‘রোসাটম’-এর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ‘অবনিন্সক টেক একাডেমি’।

শিফা নির্বাচিত হয়েছেন ‘ভিজিবল পাওয়ার ফিমেল লিডারশিপ’ ক্যাটাগরিতে। এই বাছাই প্রক্রিয়ায় সারা বিশ্ব থেকে অসংখ্য আবেদন জমা পড়ে। কয়েক ধাপের বাছাই প্রক্রিয়া শেষে শিফাকে নির্বাচিত করা হয় তার কর্ম অভিজ্ঞতা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, পুরস্কার ও স্বীকৃতি এবং গবেষণাধর্মী অবদানের ভিত্তিতে।

নির্বাচিত ৫০ নারী নেত্রী অংশ নেবেন রাশিয়ার ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইক ও আন্তর্জাতিক নারী নেতৃত্ব কর্মশালা ‘ফিমেল লিডারশিপ ক্যাম্প’-এ। এ আয়োজন ঘিরে পারমাণবিক শিল্পের ৮০ বছরের সাফল্য উদযাপনে একত্র হবেন বিশ্বের ১০ হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারী।

শিফার রয়েছে আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা। ভারতের মেঘালয়ের নর্থ-ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটিতে গবেষণায় যুক্ত ছিলেন তিনি। এছাড়া ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস)-এ প্রভাষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ভিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অধীনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গ্রান্ট অ্যাকুইজিশন ম্যানেজমেন্টের লিড প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি দেশের তরুণদের সফট স্কিল ও যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছেন এবং নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ভিলেজ ইমপাওয়ারমেন্ট’ নামের সংগঠন, যার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তিনি।

গাজীপুরের সন্তান শিফার বেড়ে ওঠা এক অনুপ্রেরণার গল্প। তার বাবা ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ দু’বার জাতিসংঘের স্কলারশিপ পেয়েছিলেন এবং উচ্চশিক্ষা নিয়েছিলেন মস্কোর লুমুম্বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মা সোহরাত বেগম ছিলেন গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শিফার সক্রিয় অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন রাশিয়ার সোচিতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যালে, যেখানে অংশ নেন ৮৫ তরুণ-তরুণী। ২০২৪ সালে তিনি মস্কোতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস কমিটিতে বাংলাদেশের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দেন এবং একই বছরের অক্টোবরে ওরেনবুর্গে আয়োজিত ইউরেশিয়া গ্লোবাল সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন, যেখানে সমাপনীতে বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদায় উপস্থাপন করা হয়।

তরুণ বয়সেই শিফা নিজেকে আন্তর্জাতিক বক্তা হিসেবে পরিচিত করেছেন। ২০১৯-২০ সালে টোস্টমাস্টার্স ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব পাবলিক স্পিকিংয়ে বাংলাদেশ থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্পিচ কনটেস্ট চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। পরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে প্রতিযোগিতা করেন। বাংলাদেশের প্রথম অ্যাডভান্সড টোস্টমাস্টার্স ক্লাবের নারী সভাপতি ছিলেন তিনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের দুটি ক্লাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারত ও নেপালে আন্তর্জাতিক বক্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন এবং নেপালের লাক্সমী ব্যাংকেও বক্তব্য রেখেছেন।

বর্তমানে শিফা রাশিয়ার ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল ডাইরেক্টোরেটের প্রতিনিধিত্বকারী ন্যাশনাল প্রিপারেটরি কমিটি অব বাংলাদেশের শিশু কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে শিফা জানান, ২০২৭ সালের মধ্যে তার সংগঠন ‘ভিলেজ ইমপাওয়ারমেন্ট’-এর মাধ্যমে অন্তত এক লাখ শিশুকে কমিউনিকেশন, প্রেজেন্টেশন ও স্পিকিং দক্ষতায় প্রশিক্ষিত করে আত্মবিশ্বাসী করে তোলাই তার লক্ষ্য।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত