ঢাকা, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২

সাত কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির গন্ধ!

২০২৫ অক্টোবর ০৪ ১৪:১৮:১২

সাত কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির গন্ধ!

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক উত্থান আবারও দেখা যাচ্ছে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে শতভাগেরও বেশি। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব উত্থান কোম্পানির মৌলভিত্তি বা আর্থিক পারফরম্যান্সের কারণে নয়, বরং ‘কারসাজি ও কৃত্রিম চাহিদা’ সৃষ্টির ফলেই এমন উল্লম্ফন ঘটছে।

ডিএসই, স্টকনাও এবং আমারস্টকেরতথ্য অনুযায়ী, তিন মাসের ব্যবধানে জিকিউ বলপেন, প্রগতি লাইফ, আইএসএন, সোনালী পেপার, কেঅ্যান্ডকিউ, দুলামিয়া কটন ও সাপোর্ট—এই সাত কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ১০০ থেকে ২৪৭ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীরা তিন মাস আগের দামের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি মূল্যে এখন এসব শেয়ার কিনছেন।

সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জিকিউ বলপেনের শেয়ার, যা তিন মাসে ১৬০ টাকা থেকে ৫৫৬ টাকা ৯০ পয়সায় পৌঁছেছে—বৃদ্ধি প্রায় ২৪৭ শতাংশ। এছাড়া প্রগতি লাইফের দাম বেড়েছে ৯৪ শতাংশ, আইএসএনের ১৭৫ শতাংশ, সোনালী পেপারের ১১৭ শতাংশ, কেঅ্যান্ডকিউর ১২১ শতাংশ, দুলামিয়া কটনের ১১৫ শতাংশ এবং সাপোর্টের ১০২ শতাংশ।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি বা ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি এই হারে বৃদ্ধির সমর্থন করে না। বরং বাজারে কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোভে পড়ে এসব শেয়ারে প্রবেশ করেন। একবার দরপতন শুরু হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এই খুচরা বিনিয়োগকারীরাই।

তাদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে এসব কোম্পানির শেয়ার টানা উর্ধ্বমুখী থাকলেও কোম্পানির ইপিএস, সম্পদ মূল্য বা ডিভিডেন্ড ঘোষণা—কোনোটিতেই বড় কোনো পরিবর্তন নেই। ফলে এই উত্থানকে তারা “বাজার কারসাজির স্পষ্ট ইঙ্গিত” হিসেবে দেখছেন।

বাজারসংশ্লিষ্টদের পরামর্শ, এখনই এমন উত্তপ্ত শেয়ারে নতুন করে প্রবেশ না করাই ভালো। বরং যাদের হাতে এই শেয়ার আছে, তারা ধীরে ধীরে মুনাফা তুলে নেওয়ার কৌশল নিতে পারেন। কারণ কোম্পানিগুলোর শেয়ারে নেগেটিভ সেন্টিমেন্ট তৈরি হলেই এই শেয়ারগুলোতে বড় দরপতনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

বাজারসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শেয়ারগুলোর সাম্প্রতিক লেনদেনের ধরনে কারসাজির সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তাদের বিশ্লেষণ অনুসারে, গত কয়েক সপ্তাহের লেনদেন ডেটা গভীরভাবে পর্যালোচনা করলেই প্রমাণ মিলবে যে একটি পরিকল্পিত গোষ্ঠী সুকৌশলে এই শেয়ারগুলোতে অস্বাভাবিক কেনাবেচা করছে।

তারা ব্যাখ্যা করে বলেন, অল্প কয়েকটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বারবার বড় অঙ্কের ক্রয়াদেশ (অর্ডার) দেওয়া হচ্ছে, আবার সেগুলোকে দ্রুত বাতিল বা অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। এটি বাজারে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি এবং শেয়ারদর প্রভাবিত করার একটি চিরাচরিত কৌশল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সাম্প্রতিক লেনদেন খতিয়ে দেখা দরকার। এর মাধ্যমে কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম সহজেই চিহ্নিত করা এবং শেয়ারবাজারের বৃহত্তর স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত