ঢাকা, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় পাঁচ ইসলামী ব্যাংকে সবুজ সংকেত

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ০৩ ২১:২৯:৫৭

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় পাঁচ ইসলামী ব্যাংকে সবুজ সংকেত

হাসান মাহমুদ ফারাবী: শেয়ারবাজারের দীর্ঘ মন্দার অন্ধকার ভেদ করে নতুন করে আলো ছড়াচ্ছে ইসলামী ব্যাংকগুলোর শেয়ার। একসময় তলানিতে নেমে যাওয়া পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের (সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও এক্সিম ব্যাংক) শেয়ারদর একীভূতকরণের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের পর আবার দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সর্বশেষ চার কার্যদিবসে এসব শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৬% থেকে ৪৭% পর্যন্ত—যা বিনিয়োগকারীদের মনে ফেরাচ্ছে হারানো আস্থা।

পতনের অতল থেকে ঘুরে দাঁড়ানো

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ্যে আসে। খেলাপি ঋণের বোঝা, বিতর্কিত মালিকানা আর বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তায় শেয়ারগুলো একসময় রেকর্ড দরপতনে পড়ে। মাত্র দুই–তিন মাসে অনেক শেয়ারের দর শতভাগের বেশি কমে যায়।

• সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: ১৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে নেমে এসেছিল ৩ টাকায়, এখন ৪ টাকা ৪০ পয়সা।

• এক্সিম ব্যাংক: ১১ টাকা থেকে পড়ে ২ টাকা ৮০ পয়সায়, এখন ৪ টাকা।

• ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ৮ টাকা ৭০ পয়সা থেকে পড়ে ১ টাকা ৮০ পয়সায়, এখন ২ টাকা ৬০ পয়সা।

• গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: ৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে পড়ে ১ টাকা ৩০ পয়সায়, এখন ১ টাকা ৮০ পয়সা।

• ইউনিয়ন ব্যাংক: ৮ টাকা ২০ পয়সা থেকে পড়ে ১ টাকা ৪০ পয়সায়, এখন ১ টাকা ৯০ পয়সা।

কেন ফিরছে আস্থা?

বাংলাদেশ ব্যাংক সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে “ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫” জারি করেছে। এতে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে—এই পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে নতুন রূপে যাত্রা শুরু করবে। বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসবে ব্যাংকগুলো, মালিকানা যাবে সরকারের হাতে। এজন্য সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা দিতে রাজি হয়েছে।

শুরুতে আশঙ্কা ছিল—শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু গণমাধ্যম ও বিনিয়োগকারীদের চাপ বাড়লে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও মন পরিবর্তন করে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ইঙ্গিত দিয়েছে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিপূরণ বা নতুন একীভূত ব্যাংকের শেয়ার দেওয়ার বিকল্প বিবেচনায় আসতে পারে। এই খবরে বাজারে আশার সঞ্চার হয়েছে।

নতুন যাত্রার সম্ভাবনা

যদিও পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের উপর দীর্ঘ সময় ধরে খেলাপি ঋণের পাহাড় (গড়ে ৭৮%) চাপ হয়েছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতির ছায়া পড়েছিল, তবুও একীভূতকরণের সাহসী পদক্ষেপ এই ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মুক্ত করছে। সরকারের সম্পৃক্ততা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয় তত্ত্বাবধানে ব্যাংকগুলো এখন স্থিতিশীল ও নিরাপদ পথে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা পাচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিন্তভাবে তাদের অর্থ ব্যাংকগুলোতে রাখতে পারবে এবং বাজারে ইতিবাচক মনোভাব ফিরে এসেছে।

বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি শুধু পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের জন্য নয়, পুরো শেয়ারবাজারের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা। একীভূতকরণের মাধ্যমে শেয়ারদরে স্থিতিশীলতা ও আস্থার পুনরুদ্ধার সম্ভব হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে তলানিতে থাকা শেয়ারগুলোতে আবার আগ্রহ দেখাচ্ছেন, যা বাজারের সম্প্রসারণ ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত