ঢাকা, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২

পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিচ্ছেন পাঁচ প্রশাসক

মোবারক হোসেন
মোবারক হোসেন

সিনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ০৩ ০৮:২২:৪০

পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিচ্ছেন পাঁচ প্রশাসক

মোবারক হোসেন: দেশের ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতিহাসে প্রথমবার একসঙ্গে শেয়ারবাজারের পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করে নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নতুন ব্যাংকের নাম রাখা হবে ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক।

নতুন একীকরণের আগে প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক বসানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশাসকদের নাম ইতিমধ্যেই নির্ধারণ করা হয়েছে, যারা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা। আইনি পর্যালোচনা শেষ হলে এবং নতুন কোনো আপত্তি না এলে তারা দ্রুত দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন। কারা কোন ব্যাংকে প্রশাসক হবেন, তা প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আগামী সপ্তাহের মধ্যে নিশ্চিত হবে।

নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী প্রশাসকদের মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের দায়িত্ব পাচ্ছেন নির্বাহী পরিচালক মো. শওকাতুল আলম, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্বে থাকবেন নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক হচ্ছেন নির্বাহী পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন। ইউনিয়ন ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে যাচ্ছেন সিলেট অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে টাঁকশালের পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান। প্রতিটি ব্যাংকে প্রশাসকের পাশাপাশি একজন অতিরিক্ত পরিচালক, একজন যুগ্ম পরিচালক ও একজন উপপরিচালক অন্তর্ভুক্ত থাকবেন, ফলে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক টিম দায়িত্ব নেবে।

আইনি জটিলতা এড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা প্রায় শেষ পর্যায়ে, লিখিত মতামত পাওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদের সভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পরই প্রশাসকেরা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।”

পাঁচ ব্যাংকের এ অবস্থা পৌঁছানোর পেছনে দীর্ঘ অনিয়ম ও দুর্নীতির ইতিহাস রয়েছে। ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং বিপুল অর্থ বিদেশে পাচারের কারণে ব্যাংকগুলো ভয়াবহ খেলাপির ফাঁদে আটকে পড়েছে।

বর্তমানে পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত আমানত প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, বিপরীতে ঋণ ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। এর ৭৬ শতাংশই খেলাপি। ইউনিয়ন ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ৯৭, গ্লোবাল ৯৫, সোশ্যাল ইসলামী ৬২.৩ এবং এক্সিম ৪৮.২ শতাংশ। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া কার্যত অসম্ভব।

সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, এজন্য প্রয়োজন ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার ২০০ কোটি, আমানত বিমা ট্রাস্ট থেকে আসবে ৭ হাজার ৫০০ কোটি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দেবে আরও ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার শেয়ার। সরকারের সম্মতিও ইতিমধ্যেই মিলে গেছে।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত