ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২

শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

মোবারক হোসেন
মোবারক হোসেন

সিনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ৩০ ২৩:২৫:৫৯

শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

মোবারক হোসেন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে হওয়া বড় ধরনের প্রতারণা ফাঁস করেছে ডিসমিসল্যাব-এর মাসব্যাপী একটি অনুসন্ধান। প্রতারকদের কৌশল খুবই সরল হলেও কার্যকর: প্রথমে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে দ্রুত উচ্চ রিটার্নের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এরপর তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে টেনে নিয়ে সেখানে ভুয়া বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা হয়। একবার বিনিয়োগকারী ফাঁদে পড়লে, তাদের ভুয়া ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে এবং বিকাশ বা ক্যাশ-এর মতো এমএফএস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে অর্থ বিনিয়োগ করতে বলা হয়।

ভুয়া গ্রুপের জালে ৩,০০০ সদস্য

অনুসন্ধানী দলটি নিজেদের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারকদের একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রবেশ করে পুরো প্রক্রিয়াটি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে। অনুসন্ধানে সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড এবং ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ-এর মতো সুপরিচিত ব্রোকারেজ সংস্থার নাম ব্যবহার করা অন্তত ২০টি সক্রিয় গ্রুপ খুঁজে পাওয়া যায়। এই গ্রুপগুলোর সম্মিলিত সদস্য সংখ্যা ৩,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।

স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম ডিসমিসল্যাব-এর তথ্যমতে, কেবল সেপ্টেম্বর মাসেই কমপক্ষে ১৫টি ফেসবুক পেজ থেকে শত শত বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছিল এই গ্রুপগুলোতে সদস্য টানার জন্য। প্রতিটি গ্রুপই এমনভাবে সাজানো, যেন বিনিয়োগকারীরা এটিকে একটি বৈধ লেনদেনের প্রক্রিয়া মনে করে।

ভুয়া অ্যাপ, নকল ওয়েবসাইট ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে লেনদেন

প্রতারকরা বিশ্বস্ততার ভান করতে আসল ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের নাম ও লোগো ব্যবহার করে নকল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে। যেমন—সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড-এর নামে তৈরি গ্রুপে ভুয়া একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়, যা দেখতে আসল ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের মতো। একইভাবে, ব্র্যাকের নামে তৈরি গ্রুপে আসল সংস্থার ব্র্যান্ডিং নকল করা একটি ভুয়া ওয়েবসাইটে ইউজারদের পাঠানো হতো। সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, বিনিয়োগকারীদের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্রোকারেজ চ্যানেলে টাকা না পাঠিয়ে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি প্রতারকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হয়। এমনকি প্রতারকরা তাদের প্রচারণার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন-এর মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ও ছবিও ব্যবহার করেছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার সতর্কবার্তা ও মামলার প্রস্তুতি

এই কেলেঙ্কারির শিকার হওয়া ব্রোকারেজ সংস্থাগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-কে এই প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক করেছে। এই তথ্য ফাঁস হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং বিএসইসি একই ধরনের প্রতারক চক্র সম্পর্কে সতর্কবার্তা জারি করেছিল।

ডিএসই স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল, প্রতারকরা ডিএসই-এর নাম, লোগো এবং অফিসিয়াল ঠিকানা ব্যবহার করছে। এদিকে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে যে, নিবন্ধন ছাড়াই শেয়ারবাজার সংক্রান্ত পরামর্শ প্রকাশ করা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রিসার্চ অ্যানালিস্ট) রুলস, ২০১৩ অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত