ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২

শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিএসইসি চেয়ারম্যানের যুগান্তকারী ঘোষণা

২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১৮:৫৮:০৭

শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিএসইসি চেয়ারম্যানের যুগান্তকারী ঘোষণা

মোবারক হোসেন: শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এক ঐতিহাসিক সংস্কারের পথে হাঁটছে। বিএসইসি-এর চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন, বাজারের শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং সব ধরনের অপব্যবহার বা প্রতারণা বন্ধ করতে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত সকল বিধিমালাকে একটি একক কাঠামোর অধীনে নিয়ে আসা হচ্ছে। 'বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ' উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা জানান।

আইনি জটিলতা দূর করে বাজারের ভিত্তি মজবুত করার প্রচেষ্টা

বিএসইসির চেয়ারম্যান মাকসুদ জোর দিয়ে বলেন, "বর্তমান কমিশন তাদের দায়িত্বভার গ্রহণের শুরু থেকেই বাজারে সব ধরনের প্রতারণা রোধে অঙ্গীকারবদ্ধ।" তিনি উল্লেখ করেন, বাজারে আইনের স্বচ্ছতা বাড়াতে কমিশন ইতোমধ্যে 'বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩' এবং 'সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯'—এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনকে একত্রিত করার কাজ শুরু করেছে। একই সঙ্গে, সিকিউরিটিজ-সম্পর্কিত সব বিধিমালা ও নির্দেশনাবলী এক জায়গায় সংকলন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা আইনি জটিলতা কমিয়ে বাজারে একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর নিয়ন্ত্রক পরিবেশ তৈরি করবে। এটি বাজারের ভিত্তিকে আরও মজবুত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অতীতের কেলেঙ্কারিতে কঠোর পদক্ষেপ: শাস্তির নজির সৃষ্টি

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বিএসইসি অতীতের সব ধরনের অনিয়ম মোকাবিলায় প্রস্তুত, চেয়ারম্যানের বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বর্তমান কমিশন বাজারে অতীতের অনিয়ম ও কেলেঙ্কারিগুলো খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির দাখিল করা ১২টি প্রতিবেদনের মধ্যে সাতটি ক্ষেত্রে জড়িতদের বিরুদ্ধে কমিশন ইতোমধ্যে দৃঢ় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এই পদক্ষেপ বাজারে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে যে, অনিয়মের দিন শেষ এবং অপরাধীরা আর পার পাবে না।

আদালতের জটিলতায় বিলম্ব: বিচার বিভাগের সহযোগিতা কামনা

তবে এই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পথে কিছু আইনি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলেও বিএসইসি চেয়ারম্যান স্বীকার করেন। তিনি উল্লেখ করেন, "বেস্ট হোল্ডিংস এবং কোয়েস্ট বিডিসি-এর মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় চলমান রিট পিটিশন এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বাস্তবায়ন আটকে আছে।" এই পরিস্থিতিতে দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং তদন্তের ফলাফল কার্যকর করতে তিনি সরকার ও বিচার বিভাগের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেছেন, যা বাজারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সুশাসন ও প্রযুক্তির জোর: তহবিল সুরক্ষাই মূল লক্ষ্য

বিএসইসি শুধু আইনি সংস্কারেই মনোযোগ দিচ্ছে না, বরং বাজারের গঠনগত উন্নতিতেও জোর দিচ্ছে। চেয়ারম্যান জানান, মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে আরও শক্তিশালী করতে ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান এবং অ্যাসেট ম্যানেজারদের ভূমিকা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একই সাথে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রতারণার মাধ্যমে তহবিল আত্মসাৎ রোধ করতে সমস্ত ব্রোকারেজ ফার্মকে একটি ট্যাম্পার-প্রুফ সমন্বিত ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে। এই প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে যে, গ্রাহকের তহবিল থাকবে সুরক্ষিত।

বিএসইসি চেয়ারম্যান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, "আমরা যদি এই বাজারকে প্রতারণামুক্ত করতে পারি এবং বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি, তবে এর সম্ভাবনা হবে সুদূরপ্রসারী।" বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বর্তমান কমিশনের বহুমুখী উদ্যোগ একটি স্বচ্ছ, শক্তিশালী এবং আস্থাশীল শেয়ারবাজার প্রতিষ্ঠার দিকে স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করছে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত