ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২

শেয়ারবাজারের 'আস্থা সপ্তাহ': বড় পরিবর্তনের নীরব বিপ্লব বিএসইসির!

২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১৫:১৪:১৬

শেয়ারবাজারের 'আস্থা সপ্তাহ': বড় পরিবর্তনের নীরব বিপ্লব বিএসইসির!

মোবারক হোসেন: শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবার বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উদযাপন করল এক নতুন, কৌশলগত ও নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ায়, যা শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। গত ০৬ অক্টোবর, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে আয়োজিত হয় বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, যা ছিল এক অর্থে শেয়ারবাজারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের এক বিশেষ 'হাই-টেক' কর্মশালা।

এবারের আয়োজনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সরাসরি উপস্থিতি ছিল না, যা নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা প্রশ্ন উঠলেও, বিএসইসি সূত্র এবং অনুষ্ঠানের ভিতরের খবর বলছে, এটি ছিল আসলে বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি পদক্ষেপ। বিশ্বের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিজ কমিশনস (আইওএসসিও)-এর এই বছরের থিম ছিল— "প্রযুক্তি ও এআইনির্ভর আর্থিক শেয়ার লেনদেনের ঝুঁকি ও তথ্য সুরক্ষা"।

এই অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং প্রযুক্তি-নির্ভর বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য বিএসইসি প্রথম ধাপে শেয়ারবাজারের শীর্ষ নীতিনির্ধারক, দুই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান, ব্রোকার হাউসের সিইও এবং আইনি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি 'কোর গ্রুপ' তৈরি করে। উদ্দেশ্য ছিল: নিরাপদ প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং বিনিয়োগকারী তথ্য সুরক্ষার জন্য একটি অভিন্ন, শক্তিশালী কৌশল প্রণয়ন করা, যা পরে বড় পরিসরে বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছানো হবে।

বিএসইসি-এর চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে আইনি কাঠামোর জোরদার করার দৃঢ় বার্তা দেয়। এছাড়া, বিএসইসি গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ইয়াওয়ার সায়ীদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার জিসান হায়দার কর্তৃক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন এই ইঙ্গিত দেয় যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইনগত ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি ছিল মূলত আলোচনার গোপনীয়তা ও গুরুত্ব বজায় রাখার জন্য। তবে অনুষ্ঠানে একজন সাংবাদিকের উপস্থিতির খবর জানতে পেরে এক কর্মকর্তার তাৎক্ষণিক উদ্বেগ প্রকাশ করা— এটিই প্রমাণ করে যে বিএসইসি তার অভ্যন্তরীণ নীতি ও গোপনীয়তাকে কতটা গুরুত্ব দেয়। অন্যদিকে, সংস্থার মুখপাত্র আবুল কালামের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সমস্ত তথ্য দ্রুত প্রকাশের আশ্বাস দেওয়া, এটি নিশ্চিত করে যে, কৌশলগত নীরবতা সত্ত্বেও চূড়ান্ত লক্ষ্যে স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই বদ্ধপরিকর বিএসইসি।

এই প্রাথমিক প্রস্তুতির পর, এবার মূল পর্বের পালা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান নিশ্চিত করেছেন, বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ ও মার্চেন্ট ব্যাংক সমিতি বিএমবিএ যৌথভাবে জুম প্ল্যাটফর্মে একটি সেমিনার আয়োজন করতে চলেছে।

এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে প্রথম ধাপে তৈরি হওয়া সুরক্ষা কৌশল ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর বিনিয়োগ শিক্ষা, যা আইওএসসিও-এর থিমের মূল নির্যাস বহন করবে। অর্থাৎ, বিএসইসি প্রথমে মঞ্চ তৈরি করে নিয়ে এবার তা বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করছে।

বিএসইসি-এর এই পদক্ষেপ দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে যে, বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের মূল লক্ষ্য— বিনিয়োগ শিক্ষা, আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা— এবার গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে আরও টেকসই এবং কার্যকরী উপায়ে সম্পন্ন হবে।

তবে, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই 'নিঃশব্দ বিপ্লব' নিয়ে বিনিয়োগকারীদের গভীর কৌতূহল থেকেই যায়। পর্দার আড়ালে এত বড় কৌশলগত প্রস্তুতি— যেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ছিলেন অনুপস্থিত— তা কি শুধুই আগামী দিনের সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতি, নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে শেয়ারবাজারের বৃহত্তর কাঠামোগত পরিবর্তনের কোনো অজানা ইশারা? বিএসইসি-এর এই 'নীরব পরিবর্তনের বিপ্লব' তাই কেবল আলোচনার জন্ম দিচ্ছে না, এটি জন্ম দিচ্ছে রহস্যময় প্রত্যাশারও।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত