জালিয়াতিমুক্ত বাজারের বার্তা নিয়ে শুরু বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ

আবু তাহের নয়ন: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর আয়োজনে আজ রবিবার (৬ অক্টোবর ২০২৫) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি মাল্টিপারপাস হলে ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ–২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

International Organization of Securities Commissions (IOSCO)-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর এ সপ্তাহ পালন করে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়— ‘Technology and Digital Finance, Artificial Intelligence, and Fraud and Scam Prevention’, যার মধ্যে থেকে বিএসইসি বেছে নিয়েছে ‘Fraud & Scam Prevention’ বিষয়টি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শুরুতেই তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনারবৃন্দ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার শীর্ষ নির্বাহীগণ, ডিএসই ও সিএসই প্রতিনিধিসহ ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রতিনিধিরা।

স্বাগত বক্তব্যে বিএসইসি কমিশনার মো. আলী আকবর বলেন, “বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা আমাদের নীতিগত অঙ্গীকার। জালিয়াতি প্রতিরোধ কেবল নিয়ন্ত্রক দায়িত্ব নয়, এটি একটি নৈতিক কর্তব্য। এজন্য শিক্ষা ও সচেতনতার পাশাপাশি জবাবদিহির সংস্কৃতিও গড়ে তুলতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের শিক্ষিত ও সক্ষম করে তুলতে নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।”

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জিসান হায়দার ও আর্থিক খাত বিশ্লেষক ইয়াওয়ার সাইদ। তাঁরা প্রতারণা ও জালিয়াতির ধরন, সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধে বিএসইসির পদক্ষেপ, নিয়ন্ত্রক কাঠামো, বাজার নজরদারি ও শাস্তিমূলক কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বক্তারা জালিয়াতির ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা ও এনফোর্সমেন্ট শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন।

পরে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রিপন কুমার দেবনাথ, ডিএসই-এর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং ব্যারিস্টার কারিশমা জাহান। আলোচনায় IOSCO ঘোষিত সপ্তাহের মূল বার্তা ও বিনিয়োগকারী সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম নিয়ে মতবিনিময় হয়।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩’ ও ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’ একত্রিত করে একটি আধুনিক আইন প্রণয়ন সময়ের দাবি। পাশাপাশি সিকিউরিটিজ–সংক্রান্ত সব নিয়ম–নীতিও সহজবোধ্যভাবে একত্রে আনা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “আর্থিক জালিয়াতি রোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, প্রয়োজনে দুদক ও বিএফআইইউসহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, “কমিশন ইতোমধ্যে উল্লিখিত দুই আইন একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অতীতের অনিয়ম ও জালিয়াতি অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৭টি মামলায় ইতিমধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” আদালতের স্থগিতাদেশজনিত কারণে কিছু প্রতিবেদন বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, “প্রতারণা প্রতিরোধে সব ব্রোকারকে এখন সমন্বিত ও অপরিবর্তনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের সুশাসন ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির জবাবদিহিতা নিশ্চিতেও কার্যক্রম চলছে।” চেয়ারম্যান দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বিনিয়োগের সঙ্গে যুক্ত করতে একটি আধুনিক, নিরাপদ ও প্রতারণামুক্ত পুঁজিবাজার গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আগামী ৮ অক্টোবর ডিএসই, সিএসই, ডিবিএ ও সিডিবিএল-এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে “Empowering Investors through Emerging Technology & Digital Finance” শীর্ষক সেমিনার এবং ১২ অক্টোবর বিএআইসিএম আয়োজন করবে “Financial Statement Analysis and Its Relevance in Machine Learning-based Stock Price Prediction” শীর্ষক কর্মসূচি।

এএসএম/