ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২

মূলধন ঘাটতিতে ডুবেছে উত্তরা ফাইন্যান্স, বিনিয়োগকারীরা অন্ধকারে

২০২৫ অক্টোবর ০৬ ২১:৪৫:৫৯

মূলধন ঘাটতিতে ডুবেছে উত্তরা ফাইন্যান্স, বিনিয়োগকারীরা অন্ধকারে

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড-এর আর্থিক চিত্র আরও বাজারে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭১২ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

সোমবার (০৬ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে কোম্পানিটির নিরীক্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অপ্রকাশিত থাকা এই আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাজারে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অনেকে বলছেন, এতো বড় ঘাটতির খবর দীর্ঘ চার বছর গোপন রাখা একটি গুরুতর আস্থাহীনতার ইঙ্গিত।

নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে উত্তরা ফাইন্যান্সের সুদ বাবদ লোকসান হয়েছে ৬১ কোটি ১৮ লাখ টাকা, এবং পরিচালন লোকসান দাঁড়িয়েছে ১০৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বছর শেষে কর পরবর্তী নিট লোকসান দাঁড়ায় ৪৩৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা শেয়ারপ্রতি লোকসান ৩৩ টাকা ১৩ পয়সা। এই বিপুল লোকসান কোম্পানির আর্থিক কাঠামোকে নড়বড়ে করে দিয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

নিরীক্ষকের পর্যবেক্ষণে আরও উঠে এসেছে, ২০২০ সালে কোম্পানিটির মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে যোগ্য মূলধন ঘাটতি ৫৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, আর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের ওপর ভিত্তি করে ঘাটতি ৬৫২ কোটি ২১ লাখ টাকা। এই হিসাব বলছে, প্রতিষ্ঠানটি কার্যত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত মূলধন মানদণ্ডের বহু নিচে অবস্থান করছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই বছর উত্তরা ফাইন্যান্স তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউএফআইএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডকে ১৪৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই কোম্পানিটি আরও ১ হাজার ৩৭৩ কোটি ৩১ লাখ টাকার লেনদেন করেছে, যা সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধান লঙ্ঘন। নিরীক্ষকরা মত দিয়েছেন, এসব লেনদেনে কোম্পানি যথাযথ সতর্কতা ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুসরণ করেনি।

এদিকে, অনুমোদনবিহীন বকেয়া লেনদেনের পরিমাণ ২০২০ সাল পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৫৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর বড় অংশই দেওয়া হয়েছে স্বার্থ–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে, যা আর্থিক অসদাচরণের ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এই বিপুল বকেয়ার বিপরীতে ২ হাজার ১৫০ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ব্লক দায় রেকর্ড করেছে।

নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০ সালের ৩ আগস্ট জারি করা এফআইডি সার্কুলার নং–৮ অনুযায়ী, এক বছরের বেশি সময় সমন্বয়হীন বকেয়ার বিপরীতে শতভাগ সঞ্চিতি গঠন বাধ্যতামূলক। কিন্তু উত্তরা ফাইন্যান্স এ বিষয়ে কোনো সঞ্চিতি গঠন করেনি, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পষ্ট নির্দেশনার অমান্য।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া উত্তরা ফাইন্যান্সের অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা, আর পরিশোধিত মূলধন মাত্র ১৩১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৫০৪টি। এর মধ্যে সাধারণ, বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৫৫.৫৬ শতাংশ শেয়ার। কোম্পানিটির অদক্ষতা ও অনিয়মের চাপ এখন মূলত ছোট বিনিয়োগকারীর কাঁধেই এসে পড়েছে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

বাংলাদেশি টাকায় আজকের (৭ অক্টোবর) মুদ্রা বিনিময় হার

বাংলাদেশি টাকায় আজকের (৭ অক্টোবর) মুদ্রা বিনিময় হার

ডুয়া ডেস্ক: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিদিনের মুদ্রা বিনিময় হার জানা সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও প্রবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক অর্থনীতির... বিস্তারিত