ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

লাভজনক খাতের শক্তিতে এসি আইয়ের বড় উত্থান

২০২৫ ডিসেম্বর ০২ ২০:৩০:০৩

লাভজনক খাতের শক্তিতে এসি আইয়ের বড় উত্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্মা ও রসায়ন খাতের প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি (এসিআই) চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রথম প্রান্তিকে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে মিশ্র ফলাফল দেখালেও প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে কর-পূর্ব মুনাফা করেছে ৭৫ কোটি ১ লাখ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। মূলত কোম্পানির বেশ কয়েকটি লাভজনক খাত যেমন, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রাণিস্বাস্থ্য, ভোক্তা পণ্য, মোটরস এবং লবণ খাত এই ইতিবাচক পরিবর্তনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকে যেসব খাতে গ্রুপটি ২৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লোকসান দেখেছিল, এ বছর সেসব খাতেই লাভে ফিরেছে, ফলে গ্রুপটির সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

অন্যদিকে লোকসানকারী খাতগুলো যেমন, স্বপ্ন রিটেইল চেইন, খাদ্য, প্লাস্টিকস ও স্বাস্থ্যসেবা এখনো চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও তাদের সম্মিলিত লোকসান কিছুটা কমেছে। লোকসানকারী এসব ব্যবসায় কর-পূর্ব ক্ষতি এ বছর কমে ১৪৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ কম। বিশেষ করে স্বপ্ন রিটেইলের রাজস্ব ২৭ শতাংশ বেড়ে ৭১৭ কোটি টাকায় পৌঁছালেও এই খাতটি এখনো ৬৫ কোটি টাকার বড় ধরনের লোকসান বহন করছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সর্বাধিক ৭২ কোটি টাকার কর-পূর্ব লোকসান করেছে, যা গ্রুপের জন্য সবচেয়ে বড় চাপের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোম্পানির প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, লাভজনক পোর্টফোলিওগুলোর শক্তিশালী অবদান এসি আইকে পুনরায় লাভে ফিরতে সহায়তা করেছে। প্রথম প্রান্তিকে গ্রুপটি ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার নিট মুনাফা করেছে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ৪২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ পয়সায়। একই সঙ্গে গ্রুপটির মোট রাজস্ব ২৪.৪ শতাংশ বেড়ে ৩,৬৯৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা আগের বছরের ২,৯৭১ কোটি টাকা থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। রাজস্ব বৃদ্ধির এই ধারা বিভিন্ন খাতে ব্যবসার বিস্তৃত সম্প্রসারণ ও বিক্রয় বৃদ্ধিকে প্রতিফলিত করে।

এসি আইয়ের মোটর ব্যবসা এই প্রান্তিকে সর্বোচ্চ রাজস্ব এনে দিয়েছে। এসি আই মোটরস লিমিটেডের মাধ্যমে পরিচালিত এই ব্যবসা ৯৫০ কোটি টাকা আয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। কৃষি ও অ-কৃষি খাতে ব্যবহৃত যানবাহন আমদানি, সংযোজন ও বিক্রির পাশাপাশি কোম্পানিটি বাংলাদেশে ইয়ামাহা মোটরসাইকেল এবং এর যন্ত্রাংশ বিতরণ করে থাকে। মোটর বিভাগে কর-পূর্ব মুনাফাও ২৮ শতাংশ বেড়ে ৫৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা গ্রুপটির মোট মুনাফায় বড় ভূমিকা রেখেছে।

ফার্মাসিউটিক্যালস বিভাগও এই প্রান্তিকে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। গত বছরের একই সময়ে ৪০০ কোটি টাকার পরিবর্তে এ বছর রাজস্ব হয়েছে ৫৭০ কোটি টাকা, যা ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। কর-পূর্ব মুনাফা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ৮৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, বৃদ্ধি ১১৪ শতাংশ। প্রাণিস্বাস্থ্য, ভোক্তা পণ্য, শস্য পরিচর্যা, পিওর ফ্লাওয়ার, লবণ, খাদ্য এবং ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং, এই সব খাতেও রাজস্ব প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে এবং এগুলো গ্রুপটির সামগ্রিক পারফরম্যান্সে ইতিবাচক অবদান রেখেছে।

এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বপ্ন রিটেইলের মতো খাতে লোকসান গ্রুপটির লাভের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তবুও শক্তিশালী খাতগুলোর উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং সামগ্রিক রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে এসি আই চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, লাভজনক খাতের উন্নতি এবং লোকসানকারী খাতগুলোর ক্ষতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় কোম্পানিটি এ প্রান্তিকে দৃশ্যমানভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

এমজে/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

আজকের বাজরে স্বর্ণের দাম (৪ ডিসেম্বর)

আজকের বাজরে স্বর্ণের দাম (৪ ডিসেম্বর)

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ববাজারে টানা মূল্য ওঠানামার প্রভাব আবারও পড়েছে দেশের স্বর্ণবাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমে যাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের... বিস্তারিত