ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২

যৌ‘ন হয়রানির শিকার বাংলাদেশী নারী ক্রিকেটার, দেখুন ভাইরাল ভিডিও

২০২৫ নভেম্বর ০৬ ২২:৪৭:৩৮

যৌ‘ন হয়রানির শিকার বাংলাদেশী নারী ক্রিকেটার, দেখুন ভাইরাল ভিডিও

সরকার ফারাবী: জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার জাহানারা আলমের সাম্প্রতিক এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। দেশের নারী ক্রিকেটে যৌন হয়রানির মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন ১৬ বছর ধরে জাতীয় দলের হয়ে খেলা এবং আড়াই বছর নেতৃত্ব দেওয়া এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। জাহানারা আলম আবেগপ্রবণ হয়ে জানান যে, একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হয়েছেন তিনি, যা তাকে মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত করেছে যে, অভিযুক্তদের তিনি কোনোদিন ক্ষমা করবেন না।

শুরুর ঘটনা ও হয়রানির বিস্তারিত বিবরণ

জাহানারা আলমের ভাষ্য অনুযায়ী, হয়রানির ঘটনাগুলো তাকে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে ফেলেছে ২০২১ সাল থেকে। তিনি জানান, সেই বছর কো-অর্ডিনেটর সারফরাজ বাবুকে ব্যবহার করে 'তৌহিদ ভাই' তাকে প্রথম অনৈতিক প্রস্তাব দেন। জাহানারা কৌশলে সেই প্রস্তাব এড়িয়ে চললেও, এর পর থেকেই মনজুরুল ইসলাম মনজু নামে এক ব্যক্তির দুর্ব্যবহারের শিকার হতে শুরু করেন।

২০২২ সালের বিশ্বকাপের সময় হয়রানির মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। জাহানারা আলমের অভিযোগ অনুযায়ী, মনজু ভাই তাকে অপ্রীতিকরভাবে অ্যাপ্রোচ করতেন। নেট অনুশীলনের সময় কিংবা হ্যান্ডশেক করার মুহূর্তে তিনি খেলোয়াড়দের কাঁধে হাত রাখতেন, নিজের বুকের কাছে টেনে নিতেন এবং কানের কাছে মুখ এনে জিজ্ঞেস করতেন, "তোর পিরিয়ডের আজ কয়দিন চলতেছে?" একবার তিনি ৫ দিন উত্তর দিলে মনজু ভাই বলেন, "এতদিন পিরিয়ড থাকে নাকি? মানুষের তো তিন-চার দিনে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা। আমার দিকটাও তো দেখতে হবে তোর। পিরিয়ড শেষ হলে আমার কাছে চলে আসিস।" এমন পরিস্থিতিতে তিনি হতবিহ্বল হয়ে যেতেন, সঠিক উত্তর দিতে পারতেন না।

ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে হয়রানি এবং অন্যান্য অভিযোগ

জাহানারা আলম আরও উল্লেখ করেন যে, আন্তর্জাতিক নারী ক্রিকেট দলগুলো সাধারণত খেলোয়াড়দের মাসিক চক্রের তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি অ্যাপ ব্যবহার করে। এই তথ্য শুধুমাত্র ফিজিওথেরাপিস্ট বা ডাক্তারদের কাছে থাকার কথা। কিন্তু মনজু ভাই সেই ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে তাকে হয়রানি করতেন, যা অত্যন্ত অনৈতিক।

মনজু ভাইয়ের অন্য নারী খেলোয়াড়দের প্রতি আচরণের বিষয়েও জাহানারা মুখ খোলেন। তিনি বলেন, মনজু ভাইয়ের অভ্যাস ছিল যেকোনো মেয়ে খেলোয়াড়কে কাঁধে ধরে নিজের বুকের কাছে টেনে নিয়ে চাপা চাপি করা। এই কারণে অনেক সময় মেয়েরা দূর থেকে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতেন। এমনকি দলের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে হাসি-ঠাট্টাও হতো, যেখানে বলা হতো, "ওই যে আসতেছে, এখন বুকের মধ্যে নিয়ে নিবে।"

প্রতিবাদ, অভিযোগপত্র এবং ন্যায়বিচার কামনা

দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জাতীয় দলে সেবা দিলেও, এই ধরনের হয়রানির কারণে জাহানারা আলম প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারেননি। কারণ ক্রিকেটই ছিল তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ। তবে পরে তিনি এক 'অবজারভেশন লেটার' (অভিযোগপত্র নয়) সরাসরি বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) কাছে জমা দেন। সেখানে তিনি তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ছোট-বড় ঘটনা, সময়, তারিখ এবং ব্যবহৃত আপত্তিকর শব্দ উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান, প্রথম বিভাগের একজন নারী ক্রিকেটারও একই ধরনের হয়রানির শিকার হলে তার সাহায্য চেয়েছিলেন। সেই মেয়েটির দেওয়া ভয়েস রেকর্ডও তিনি প্রমাণ হিসেবে সিইওর কাছে জমা দিয়েছেন। মানসিক চাপের কারণেই তিনি জাতীয় দল থেকে বিরতি নিতে বাধ্য হন এবং এই নিয়ে আক্ষেপও প্রকাশ করেন। তার বিবেক খেলার যোগ্যতা না থাকায় বেতন নিতে সায় দেয়নি, যদিও বিজ্ঞাপনী চুক্তি ও ক্রিকেট আয় দিয়েই তার চলত।

জাহানারা আলম দৃঢ়ভাবে বিচার চেয়েছেন। তিনি বিসিবির কাছে নয়, বরং আল্লাহর কাছে এই অভিযুক্তদের বিচার চেয়েছেন এবং বলেছেন, তিনি চান তার চোখের সামনেই যেন এদের বিচার হয়। তার মূল দাবি, বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের জন্য যেন একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মেয়ে এমন হয়রানির শিকার না হয়।

ভিডিওটি দেখতে এখানেক্লিককরুন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

খেলাধুলা এর অন্যান্য সংবাদ