ঢাকা, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২

১০ টাকার শেয়ারে ১ পয়সা ডিভিডেন্ড, শেয়ারবাজারে তোলপাড়

২০২৫ নভেম্বর ০২ ০০:০৫:১১

১০ টাকার শেয়ারে ১ পয়সা ডিভিডেন্ড, শেয়ারবাজারে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রতি শেয়ারে মাত্র ১ পয়সা ক্যাশ ডিভিডেন্ড করে দেশের শেয়ারবাজারে আলোড়ন তুলেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ইতিহাসে এটি এখন পর্যন্ত কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির ঘোষিত সর্বনিম্ন ডিভিডেন্ড—যা বিনিয়োগকারীদের বিস্মিত করেছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

৩০ অক্টোবর প্রকাশিত মূল্য-সংবেদনশীল তথ্যানুযায়ী, শেয়ারহোল্ডাররা প্রতি ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে পাবেন মাত্র ১ পয়সা করে। অর্থাৎ, ১০টি শেয়ারের বিপরীতে একজন বিনিয়োগকারী পাবেন মাত্র ১ পয়সা। কোম্পানিটির সর্বমোট ১ কোটি ৩৫ লাখ শেয়ার হিসাব অনুযায়ী, এই ডিভিডেন্ড বিতরণে ব্যয় হবে মাত্র ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

বর্তমান বাজারদরে (১৫ টাকা ৯০ পয়সা) ১,০০০ শেয়ারের মালিক একজন বিনিয়োগকারী মোট ডিভিডেন্ড পাবেন ১ টাকারও কম। এমন ঘোষণায় অনেকেই ফেসবুক ও এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ক্ষোভ প্রকাশ করে একে ‘ঐতিহাসিক ডিভিডেন্ড রেকর্ড’ বলে ব্যঙ্গ করেছেন।

একজন বিনিয়োগকারী লিখেছেন— “যদি আপনার ১,০০০ শেয়ার থাকে, তবে আপনি পাবেন ৮৫–৯০ পয়সা। ইতিহাস সৃষ্টি হলো!”

আরেকজন মন্তব্য করেন, “এই ঘোষণায় শেয়ারহোল্ডারের মূল্য ঠিক কীভাবে সংজ্ঞায়িত হয়, তা নতুন করে ভাবতে হবে।”

বি ক্যাটাগরি টিকিয়ে রাখার কৌশল?

বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, ডিএসই-র ৬৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো কোম্পানি ০.১০ শতাংশের নিচে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, একমি পেস্টিসাইডস সম্ভবত নামমাত্র ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে কেবল বি ক্যাটাগরির মর্যাদা বজায় রাখতে।

নিয়ম অনুযায়ী, যেসব কোম্পানি পরপর দুই বছর ৫ শতাংশের নিচে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে, তারা ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকে। কিন্তু কোনো ডিভিডেন্ড না দিলে কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে লেনদেন নিষ্পত্তি করতে দুই দিনের বদলে তিন দিন সময় লাগে।

টানা লোকসানে কোম্পানি

একমি পেস্টিসাইডসের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানিটি টানা দ্বিতীয় বছরের মতো লোকসান করছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকার লোকসানের বিপরীতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নীট লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ফলে, শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) বেড়ে হয়েছে ১ টাকা ১৪ পয়সা, যা গত বছরের ৭৬ পয়সা থেকে বেশি।

এর আগের অর্থবছরগুলোতে কোম্পানিটি দিয়েছে—

• ২০২৩-২৪: ০.২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড

• ২০২২-২৩: ০.১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড

• ২০২১-২২: সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড

বর্তমানে কোম্পানির বাজারমূলধন প্রায় ২২০ কোটি টাকা, আর সর্বশেষ লেনদেনে শেয়ারের দর ছিল ১৫ টাকা ৯০ পয়সা।

বিএসইসির তদন্তের প্রস্তুতি

এদিকে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একমি পেস্টিসাইডসের পরিচালক, কর্মকর্তা ও প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানির কিছু বিনিয়োগকারী ২৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার কোনো অর্থ পরিশোধ ছাড়াই নিয়েছিলেন।

বিএসইসি বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার শাহজালাল ইকুইটি ম্যানেজমেন্টের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে এবং প্রি-আইপিও অডিটর সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং ও শফিক বসাক অ্যান্ড কোং-এর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।

কোম্পানিটি আগামী ২৯ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করেছে, যার রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ নভেম্বর।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত