ঢাকা, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২

কম মূল্যের শেয়ারের জন্য ডিএসই’র নতুন নিয়ম চালু

২০২৫ অক্টোবর ২৬ ২২:৫৪:৫৪

কম মূল্যের শেয়ারের জন্য ডিএসই’র নতুন নিয়ম চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১ টাকার কম মূল্যে লেনদেন হওয়া শেয়ারগুলোর জন্য নতুন টিক সাইজ চালু করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসই ঘোষণা করেছে যে, আগামী ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই নতুন নিয়মে ১ টাকার নিচে লেনদেন হওয়া শেয়ারগুলোর সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তন (টিক সাইজ) হবে ০১ পয়সা।

বর্তমানে সকল ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের জন্য টিক সাইজ বা সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তন ধরা আছে ১০ পয়সা। তবে সম্প্রতি কিছু কোম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্য ১ টাকার নিচে নেমে আসায়, বিদ্যমান টিক সাইজ বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। এই সমস্যা সমাধানে এবং আরও বাস্তবসম্মত লেনদেন নিশ্চিত করতে ডিএসই এই নতুন নিয়ম কার্যকর করছে।

ডিএসই কর্মকর্তারা জানান, কিছু ছোট ও মাঝারি কোম্পানির শেয়ারের দাম বর্তমানে ১ টাকার কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে এবং এরই মধ্যে দুটি কোম্পানির শেয়ারের দাম ১ টাকার নিচে নেমে গেছে। বিদ্যমান ১০ পয়সা টিক সাইজে এই শেয়ারগুলো বর্তমান সার্কিট ব্রেকার নিয়মের অধীনে লেনদেন করতে পারতো না, ফলে তাদের লেনদেন স্থগিত হয়ে যেত।

উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো শেয়ারের দাম ১ টাকা থেকে কমে ৯০ পয়সা হয়, তবে তা ১০ শতাংশ পতন বোঝায়, যা বাজারে একটি বড় পরিবর্তন। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা ৯১ পয়সায় অর্ডার দিতে পারতেন না। ফলে দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে যেত এবং লেনদেনের পরিমাণ কমে যেত।

এই প্রেক্ষাপটে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অটোমেটেড ট্রেডিং রেগুলেশনস, ১৯৯৯-এর ১৮ নং প্রবিধানের অধীনে ডিএসই এই প্রথম ১ টাকার কম মূল্যের শেয়ারের জন্য টিক সাইজ ০১ পয়সা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টিক সাইজ হলো শেয়ারের মূল্যের সর্বনিম্ন পরিবর্তন সীমা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএসই-এর ইতিহাসে এর আগে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম ১ টাকার নিচে নামেনি। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ১ টাকার কম দামের শেয়ারের জন্য টিক সাইজ পুনর্বিবেচনা করা অপরিহার্য ছিল। তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি-কে নতুন টিক সাইজ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।

সম্প্রতি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) এবং ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট-এর শেয়ার প্রতি ৯০ পয়সা মূল্যে লেনদেন হয়ে ডিএসই-তে এক ঐতিহাসিক রেকর্ড তৈরি করেছে। ডিএসই-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১০৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার তাদের অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে। এর মধ্যে ৫৫টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ারের দাম ৫ টাকার নিচে।

ডিএসই মনে করে, টিক সাইজ ০১ পয়সা করায় দামের সুক্ষ্ম পরিবর্তন সম্ভব হবে। ফলে মূল্য নির্ধারণ আরও বাস্তবসম্মত এবং বাজারবান্ধব হবে। বিনিয়োগকারীরা এখন ৮৭ পয়সা, ৮৮ পয়সা, বা ৮৯ পয়সার মতো নির্দিষ্ট দামে অর্ডার দিতে পারবেন, যা:

• 'বিড-আস্ক স্প্রেড' বা ক্রয়-বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান কমাবে।

• বাজারের তারল্য বাড়াবে।

• লেনদেন ব্যয় কমাবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, এই পরিবর্তন মূল্য স্থবিরতা কমিয়ে লেনদেন বাড়াবে এবং শেয়ারবাজারের কাঠামোকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নির্ভুল অর্ডার দেওয়ার সুযোগ বাড়বে, অর্ডার বুক গভীর হবে এবং বাজারের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে, যে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের দাম ১ টাকার নিচে নেমে গিয়েছিল, তারা আবার লেনদেন করার সুযোগ পাবেন। তবে, এই নতুন টিক সাইজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে তাদের ট্রেডিং সফটওয়্যার ও সিস্টেম হালনাগাদ করতে হবে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত