ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

গারবেজ ক্যাফে: ময়লার বিনিময়ে মিলছে খাবার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৬ ০১:৫৮:১১

গারবেজ ক্যাফে: ময়লার বিনিময়ে মিলছে খাবার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের বিভিন্ন শহরে এক অভিনব সামাজিক উদ্যোগ 'গারবেজ ক্যাফে' জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যেখানে খাবারের মূল্য টাকায় নয়, প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিশোধ করা হয়। এই রেস্তোরাঁগুলোর লক্ষ্য একদিকে অভাবী মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা, অন্যদিকে শহরের প্লাস্টিক দূষণ কমানো। ছত্তিশগড়ের আম্বিকাপুর শহরে প্রথম এই উদ্যোগ শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ভারতের অন্যান্য শহরেও তা ছড়িয়ে পড়েছে।

গারবেজ ক্যাফেতে এক কেজি প্লাস্টিক জমা দিলে পূর্ণাঙ্গ দুপুরের খাবার এবং আধা কেজি দিলে সকালের নাস্তা (যেমন সমুচা বা বড়া) পাওয়া যায়। এই উদ্যোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে বড় পরিবর্তন এনেছে। রাশমি মন্ডলের মতো অনেকে আগে প্রতি কেজি প্লাস্টিক মাত্র ১০ রুপিতে বিক্রি করতেন, এখন তারা সেই প্লাস্টিক দিয়ে পরিবারের জন্য খাবার আনতে পারেন। রাশমি বলেন, "এই ক্যাফে আমাদের জীবনে বড় পরিবর্তন এনেছে। আমরা প্লাস্টিক জমা দিয়ে খাবারের নিশ্চয়তা পাচ্ছি।"

ক্যাফে চালুর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন মানুষ এখানে খাবার পান এবং শহরের প্লাস্টিক বর্জ্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ঋতেশ সাইনি জানান, ২০১৯ সাল থেকে এই ক্যাফে প্রায় ২৩ টন প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছে। ২০১৯ সালে যেখানে বছরে ৫.৪ টন প্লাস্টিক ডাম্পিং গ্রাউন্ডে যেত, ২০২৪ সালের পর তা ২ টনে নেমে এসেছে। আম্বিকাপুর প্রতিদিন প্রায় ৪৫ টন কঠিন বর্জ্য উৎপাদন করে এবং ২০১৬ সালে তাদের বিশাল ডাম্পিং গ্রাউন্ড আধুনিকায়ন করা হয়।

সংগৃহীত প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারে ব্যবহার করা হয়; যেমন রাস্তা নির্মাণ, সিমেন্ট শিল্পে বিক্রি অথবা রিসাইক্লারদের কাছে পাঠানো হয়। ভেজা বর্জ্য কম্পোস্টে পরিণত হয় এবং সামান্য বর্জ্য সিমেন্ট কারখানায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই উদ্যোগের কারণে আম্বিকাপুর 'জিরো ল্যান্ডফিল সিটি' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শহরে এখন ২০টি স্থানীয় বর্জ্য সংগ্রহকেন্দ্র রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন মানুষ প্লাস্টিক জমা দেন।

এখানে ৪৮০ জন নারী 'স্বচ্ছতা দিদি' হিসেবে কাজ করেন। তারা ঘরে ঘরে গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করেন এবং মাসে গড়ে ৮-১০ হাজার রুপি উপার্জন করেন। এই ডোর-টু-ডোর সংগ্রহ পদ্ধতি এতটাই সফল হয়েছে যে, ছত্তিশগড় রাজ্যের ৪৮টি ওয়ার্ডে এটি চালু করা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য শুধু আম্বিকাপুর নয়, বরং আরও মাঝারি শহরের জন্য কার্যকরী, পরিবেশবান্ধব ও আর্থিকভাবে টেকসই মডেল তৈরি করা।

ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও অনুরূপ উদ্যোগ চালু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে ২০১৯ সালে, তেলেঙ্গানার মুলুগুতে এক কেজি প্লাস্টিক জমা দিলে সমান ওজনের চাল এবং কর্ণাটকের মাইসুরুতে ২০২৪ সালে ৫০০ গ্রাম প্লাস্টিকের বিনিময়ে ব্রেকফাস্ট ও ১ কেজিতে পূর্ণাঙ্গ মিল দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। উত্তর প্রদেশে এই উদ্যোগে নারীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনও সরবরাহ করা হচ্ছে। এই উদ্যোগগুলো দেখাচ্ছে কীভাবে সামাজিক সমস্যা এবং পরিবেশের দায় একসঙ্গে সমাধান করা সম্ভব, যেখানে প্লাস্টিক দূষণ কমানো এবং ক্ষুধার সমস্যা সমাধান—দুটি উদ্দেশ্যই একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা যায়।

এসপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত