ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২

বিল সি-১২: কানাডার সীমান্তনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত

২০২৫ ডিসেম্বর ২৫ ১৫:৩৬:৫৮


বিল সি-১২: কানাডার সীমান্তনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কানাডায় শরণার্থী ও অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তনের আভাস মিলছে। দেশটির লিবারেল সরকার সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন ব্যবস্থায় কঠোরতা বাড়াতে নতুন বিল প্রণয়নের পথে হাঁটছে, যা উত্তর আমেরিকায় সীমান্তনীতি নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্যোগ শরণার্থী সুরক্ষার নীতিগত কাঠামোকে বদলে দিতে পারে এবং সামাজিক পরিসরে বিভাজন আরও গভীর করতে পারে।

কানাডার ক্ষমতাসীন লিবারেল সরকার ‘বিল সি-১২’ বাStrengthening Canada’s Immigration System and Borders Actনামে একটি বিস্তৃত আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এতে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি শরণার্থী দাবিদারদের জন্য নতুন অযোগ্যতার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

বিলটি ১১ ডিসেম্বর কানাডার হাউস অব কমন্সে তৃতীয় পাঠে দ্রুত পাস হয়, সংসদের শীতকালীন ছুটির আগেই। ফেব্রুয়ারিতে সিনেটের অনুমোদন পেলে এটি আইনে পরিণত হবে।

টরন্টো মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শরণার্থী ও মানবাধিকার আইনের অধ্যাপক ইডিল আতাক বলেন, শরণার্থী সুরক্ষার দিক থেকে এটি ‘অত্যন্ত পশ্চাদমুখী আইন’। আতাক আরও বলেন, এই আইন নির্বাহী ক্ষমতার নজিরবিহীন সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে, যেখানে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে শরণার্থীদের তথ্য বিনিময় সহজ হবে এবং অভিবাসন সংক্রান্ত নথি বা প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, বাতিল বা পরিবর্তনের ক্ষমতা সরকারের হাতে আরও কেন্দ্রীভূত হবে।

আইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো কানাডায় প্রবেশের এক বছরের বেশি সময় পর কেউ আশ্রয়ের আবেদন করলে তা আরImmigration and Refugee Board of Canada-এ পাঠানো হবে না; বরং একজন অভিবাসন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবেPre-Removal Risk Assessment (PRRA)প্রক্রিয়ার জন্য।

টরন্টো স্টারে প্রকাশিত ৪০ জন আইনজীবী ও আইনি বিশেষজ্ঞের এক মতামত কলামে বলা হয়, PRRA প্রক্রিয়ায় একজন মাত্র কর্মকর্তা নথি পড়ে সিদ্ধান্ত নেন এবং এতে আবেদন বাতিলের হার অত্যন্ত বেশি। তারা আরও বলেন, নতুন আইন কানাডার অভিবাসন ইতিহাসের উদ্বেগজনক অধ্যায় বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে দক্ষিণ এশীয়, চীনা ও জাপানি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রণীত বৈষম্যমূলক নীতির স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন ও শরণার্থী আইন বিভাগের অধ্যাপক অড্রি ম্যাকলিন বলেন, ‘কেউ সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয়ের আবেদন না করার পেছনে বহু যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, নিপীড়নের শিকার কোনো যৌন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য শিক্ষার্থী হিসেবে কানাডায় এসে স্বাধীন জীবনযাপন শুরু করলে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।

২০২৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করায়, অনেকেই আশ্রয়ের আবেদন করতে বাধ্য হতে পারেন। কিন্তু নতুন আইন কার্যকর হলে তাদের জন্য বড় আইনি বাধা তৈরি হবে।

টরন্টো স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে কানাডা১৮ হাজার মানুষকে বহিষ্কারকরেছে যা ২০০৬-২০১৫ সালে স্টিফেন হার্পারের সরকারের পর সর্বোচ্চ। বহিষ্কার কার্যক্রমে ব্যয় হয়েছে৭৮ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ৫০% বেশি।

অড্রি ম্যাকলিন বলেন, PRRA এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে আশ্রয়প্রার্থীরা ন্যায়সংগত শুনানির সুযোগ পান না, যার মূল লক্ষ্যই ‘যত দ্রুত সম্ভব দেশ থেকে বের করে দেওয়া’।

সবশেষে, সরকার জানিয়েছে আইন পাস হলে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় নজরদারি ও তথ্য বিনিময় আরও কঠোর হবে, তবে সমালোচকরা মনে করছেন এটি শরণার্থী সুরক্ষার মৌলিক অধিকারকে সংকুচিত করবে এবং সমাজে আস্থার সংকট বাড়াবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরনের আইন দীর্ঘমেয়াদে কানাডার বহুত্ববাদী সমাজ কাঠামোকে চাপে ফেলতে পারে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত