ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২

ব্লুমবার্গের তালিকায় বাংলাদেশের শেয়ারবাজার কোম্পানির বড় লাফ

২০২৫ ডিসেম্বর ১৯ ২৩:০৩:৫৩

ব্লুমবার্গের তালিকায় বাংলাদেশের শেয়ারবাজার কোম্পানির বড় লাফ

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক দশক আগেও বাংলাদেশের করপোরেট সংস্কৃতিতে টেকসই উন্নয়ন বা 'সাসটেইনেবিলিটি'র বিষয়টি ছিল কেবল গুটিকয়েক বহুজাতিক ও বড় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে সময়ের বিবর্তনে জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং সুশাসনের গুরুত্ব এখন বিশ্বজুড়ে অনস্বীকার্য। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ও করপোরেট অঙ্গনেও পরিবেশগত সুরক্ষা, সামাজিক কল্যাণ ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতের এই আধুনিক চর্চাটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বিনিয়োগ তথ্য সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ১৬টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইএসজি (পরিবেশ, সামাজিক ও সুশাসন) রেটিংপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি দেশের করপোরেট খাতের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে এই তালিকায় বাংলাদেশের কোম্পানি ছিল মাত্র ৭টি। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০টিতে। আর ২০২৫ সালে এসে এক লাফে ১৬টি কোম্পানি এই বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। নতুন করে যুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে লিন্ডে বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার, সিঙ্গার বাংলাদেশ, হেইডেলবার্গ মেটেরিয়ালস, রবি আজিয়াটা, সিটি ব্যাংক, আইডিসিএল ফাইন্যান্স, গ্রামীণফোন, বিএসআরএম, বিএটি বাংলাদেশ, এমজেএল বাংলাদেশ, ওয়ালটন হাই-টেক এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।

শুধু তালিকাভুক্তিই নয়, নতুন যুক্ত হওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোর ইএসজি স্কোর আগের তালিকাভুক্ত কোম্পানির তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ। ফলে সামগ্রিক মানদণ্ডেও ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে।

ইএসজি স্কোরের দিক থেকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আধিপত্য স্পষ্ট। ১০-এর মধ্যে ৬.১৬ স্কোর অর্জন করে শীর্ষস্থানে রয়েছে লিন্ডে বাংলাদেশ, যেখানে পরিবেশগত মানদণ্ডে তাদের স্কোর ৫.০৯। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ পেয়েছে ৬.১১ স্কোর, যার মধ্যে সুশাসন সূচকে সর্বোচ্চ ৭.৪৬। সামাজিক মানদণ্ডে ৮.৯২ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গার বাংলাদেশ। তালিকায় নতুন সংযোজন হেইডেলবার্গ মেটেরিয়ালস ৪.৮৪ স্কোর নিয়ে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে।

আর্থিক খাতের মধ্যে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি দেখিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, যারা ৩.৯৯ স্কোর নিয়ে সামগ্রিক তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে। সিটি ব্যাংক ও আইডিসিএল ফাইন্যান্স—উভয়ই ৩.২৮ স্কোর নিয়ে যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে। টেলিকম খাতে দীর্ঘদিন ইএসজি সূচকে এগিয়ে থাকা গ্রামীণফোনকে পেছনে ফেলেছে রবি আজিয়াটা।

উন্নতি হলেও কিছু কোম্পানি তালিকার নিচের দিকে রয়েছে। ইস্পাত খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম ২.২২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে অবস্থান করছে। বিএটি বাংলাদেশ (১২তম), মারিকো বাংলাদেশ (১৩তম), এমজেএল বাংলাদেশ (১৪তম) ও ওয়ালটন হাই-টেক (১৫তম) আগের তুলনায় স্কোর বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। দেশের বড় ওষুধ প্রস্তুতকারক স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস স্কোর বাড়িয়ে ১.২২ করলেও তালিকার সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।

আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের এই পথচলা ইতিবাচক হলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় ইএসজি মানদণ্ডে আমরা এখনো বেশ পিছিয়ে। ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে—ভারতে ৬৮০টি, ইন্দোনেশিয়ায় ২০৫টি এবং পাকিস্তানে ৭৪টি কোম্পানি ইএসজি রেটিংয়ের আওতায় থাকলেও বাংলাদেশ এই দৌড়ে পিছিয়ে আছে। তবে আশার কথা হলো, দেশের রপ্তানি খাত বিশেষ করে 'গ্রিন গার্মেন্টস' বা পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার শক্তিশালী অবস্থান এখন বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্লুমবার্গের মতো বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে দেশীয় কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়মিত তুলে ধরা গেলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ও শিল্প খাতে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত