ঢাকা, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২
আরামিট সিমেন্টের সম্পদ নিলামে তুলছে ইসলামী ব্যাংক

মোবারক হোসেন: প্রায় ৫৩৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ঋণখেলাপির দায়ে (২১ জুলাই পর্যন্ত) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রধান মালিকানাধীন কোম্পানি আরামিট সিমেন্ট পিএলসি-এর বন্ধক রাখা সম্পদ নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।
দেশের বৃহত্তম এই বেসরকারি ব্যাংকটি গত ৪ সেপ্টেম্বর তাদের চট্টগ্রাম জুবেলি রোড শাখা থেকে নিলামের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এতে আগ্রহী ক্রেতাদের ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নিলামে তোলা সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায় ১৫ একর জমি এবং আরামিট সিমেন্ট, আরামিট পাওয়ার লিমিটেড, আরামিট স্টিল পাইপস লিমিটেড ও আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড-এর কারখানা ও ভবন।
ইসলামী ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, কোম্পানিটি তাদের প্রায় ৬.৬১ একর জমি বন্ধক রেখেছিল। ২০২২ অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকা দিয়ে শুরু হওয়া এই ঋণ ২০২৩ অর্থবছরে ৪২৩ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্ররোচনায় ইসলামী ব্যাংক এই লোকসানি প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ দিয়েছিল। কিন্তু কোম্পানিটি সময়মতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই ব্যাংক আইন মেনে ঋণ আদায়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
মালিকানা ও অন্যান্য আইনি জটিলতা
আরামিট সিমেন্টের একজন স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, যার কাছে কোম্পানির ১৪.৯৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তার স্ত্রী রুখমিলা জামান পূর্বে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কোম্পানিটির অন্যান্য স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে রয়েছে আরামিট লিমিটেড (১৯.২৯ শতাংশ), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (৬.৪৩ শতাংশ) এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (৫.২৩ শতাংশ)।
আরামিট সিমেন্ট শুধু ইসলামী ব্যাংকের কাছেই নয়, আরও একাধিক ব্যাংকের ঋণের দায়ে আইনি জটিলতায় পড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংক এশিয়ার দায়ের করা একটি মামলার পর চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত আরামিট সিমেন্টের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। এছাড়া, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকও ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার অপরিশোধিত ঋণের জন্য আরামিটের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা দায়ের করেছে।
অন্ধকার ভবিষ্যৎ
কোম্পানিটির আর্থিক সংকট আরও গভীর হয় যখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর একটি পরিদর্শন দল ২৫ জুলাই, ২০২৫ তারিখে দেখতে পায় যে এর কারখানা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।
কোম্পানির এক সিনিয়র কোম্পানি কর্মকর্তা জানান, কাঁচামালের অভাব, তারল্য সংকট এবং ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে রাজি না হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। কোম্পানিটির মোট দায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বলে অনুমান করা হচ্ছে, যার একটি বড় অংশ পুঞ্জিভূত সুদ।
আরামিট সিমেন্ট গত তিন অর্থবছর ধরে লোকসান গুনছে। সর্বশেষ ২০২২ অর্থবছরে এটি ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল এবং বর্তমানে ডিভিডেন্ড দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এটি 'জেড' ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে।
মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আরামিট সিমেন্টের শেয়ারের দাম ৬.৬২ শতাংশ কমে ১২ টাকা ৭০ পয়সায় নেমে আসে। গত এক বছরের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার দাম সর্বোচ্চ ১৮ টাকা ১০ পয়সায় এবং সর্বিনিম্ন ১০ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
এএসএম/
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- শেয়ারবাজারে দ্রুত মুনাফা তোলার ৫টি ট্রেডিং টিপস
- এক হাজার কোটি টাকার মামলায় শিবলী রুবাইয়াত গ্রেপ্তার
- তালিকাচ্যুতির ঝুঁকিতে অলিম্পিক এক্সেসরিজ
- সাবেক কর্মীদের ১৮২৩ কোটি টাকা আটকে রেখেছে ম্যারিকো
- এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ৫ কোম্পানি
- রবির মাধ্যমে দেশে আসছে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট
- সর্বোচ্চ চাহিদায় নাগালের বাইরে ১৪ প্রতিষ্ঠান
- শেয়ার কারসাজিতে ১২ জনকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা
- তিন কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- শেয়ারবাজারে মিডল্যান্ড ব্যাংকের নতুন যাত্রা
- সর্বনিম্ন দামে আটকে গেল ৭ কোম্পানির শেয়ার
- নতুন উচ্চতায় অগ্রসর হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার
- মুনাফা বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা: ঘুরে দাঁড়াচ্ছে হাক্কানী পাল্প
- চার জেডের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ আস্থা
- শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মাথাব্যথার ১১ শেয়ার