ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

শেয়ারবাজারে চলছে বহুজাতিক কোম্পানির ডিভিডেন্ড উৎসব

২০২৫ জুলাই ২৬ ০১:১৫:০৩

শেয়ারবাজারে চলছে বহুজাতিক কোম্পানির ডিভিডেন্ড উৎসব

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে তাদের নিট মুনাফার চেয়েও বেশি ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, যা বাজার বিশ্লেষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। এই অপ্রত্যাশিত প্রবণতা কেবল পুনর্বিনিয়োগের অনাগ্রহই নয়, বরং দেশে তাদের দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম সীমিত করার একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বহন করছে বলে তারা মনে করছেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর তথ্য অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত ১৩টি বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে ৯টিই তাদের মুনাফার চেয়ে বেশি পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। সম্মিলিতভাবে তাদের নিট মুনাফা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। অথচ তারা ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে প্রায় ৯ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা—অর্থাৎ নিট মুনাফার চেয়ে ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা বেশি।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, মুনাফার অতিরিক্ত এই ডিভিডেন্ড বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে মূল কোম্পানিগুলো দেশে পুনর্বিনিয়োগের আগ্রহ হারাচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে ডলার সংকটের কারণে যেসব ডিভিডেন্ড তারা বিদেশে নিতে পারেনি, এখন সেই অর্থ একবারে স্থানান্তর করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে এখনো যথেষ্ট বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে, তবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাচ্ছে না। এ বিষয়ে আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, "নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত তাদের আন্তর্জাতিক নীতির অংশ হতে পারে। কিন্তু এটাও আমাদের ব্যর্থতা যে, আমরা তাদের আকর্ষণ করতে পারছি না।"

কে কত ডিভিডেন্ড দিয়েছে?

গ্রামীণফোন সর্বোচ্চ ডিভিডেন্ড দিয়েছে—৩ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার নিট মুনাফার বিপরীতে তারা ঘোষণা করেছে ৪ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকার ক্যাশ ডিভিডেন্ড। ম্যারিকো বাংলাদেশ দিয়েছে ৬১৯ কোটি টাকা, লাফার্জহোলসিম ১১৩ কোটি টাকা। আর রবি, রেকিট বেনকিজার, সিঙ্গার, আরএকে সিরামিকস, লিন্ডে বিডি ও ইউনিলিভারসহ আরও কয়েকটি কোম্পানিও মুনাফার তুলনায় বেশি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, বিএটিবিসি, বার্জার পেইন্টস, বাটা শু ও হাইডেলবার্গ সিমেন্ট মুনাফার তুলনায় কিছুটা কম ডিভিডেন্ড দিলেও সামগ্রিক প্রবণতা একই রকম।

তবে মুনাফা চেয়ে বেশি ডিভিডেন্ড ঘোষণার বিষয়ে কোম্পানিগুলোর বক্তব্য হলো—তারা প্রচলিত নীতিমালার আওতায় থেকেই ডিভিডেন্ড দিয়েছে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো কোম্পানি কিভাবে মুনাফা ব্যবহার করবে—তা নির্ধারণ করা কোম্পানিগুলোর এখতিয়ার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।

যদিও কোম্পানিগুলো বলছে, তারা নিয়ম মেনেই চলছে, তথাপি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—বাংলাদেশে যদি যথেষ্ট প্রবৃদ্ধির সুযোগ থাকে, তবে কেন এই কোম্পানিগুলো নতুন করে বিনিয়োগ করছে না? তারা কি বাংলাদেশকে কেবলমাত্র লাভ তুলে নেওয়ার ক্ষেত্র হিসেবেই দেখছে?

এই প্রবণতা চলতে থাকলে তা দেশের শেয়ারবাজার এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে চাপ তৈরি করতে পারে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত