ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া! কী হচ্ছে ২ দেশের মধ্যে?

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুলাই ২৪ ১৮:২৪:৪৩
যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া! কী হচ্ছে ২ দেশের মধ্যে?

থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী বান নাম ইয়েন প্রদেশে একটি সামরিক ঘাঁটি ও একটি বেসামরিক হাসপাতালে রকেট হামলা চালিয়েছে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী। এই হামলায় ২ সেনা সদস্যসহ অন্তত ১০ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। এর প্রতিবাদে কম্বোডিয়ায় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড।

এতে ওই অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার বর্তমান সীমান্ত উত্তেজনার সূচনা হয়েছিল চলতি বছরের মে মাসে। ওই সময় এমেরাল্ড ট্রায়াঙ্গল এলাকায় (যেটি থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমান্ত সংযোগস্থল) দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে কম্বোডিয়ার এক সৈন্য নিহত হন।

ঘটনার পর উভয় পক্ষই পরস্পরকে সংঘর্ষের জন্য দায়ী করে এবং দাবি করে তারা কেবল আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। যদিও উভয় দেশের সামরিক নেতৃত্ব উত্তেজনা প্রশমনের আশ্বাস দিয়েছিল। তবে বাস্তবে দুই দেশই সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ায় এবং পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করে।

থাইল্যান্ড সীমান্ত এলাকার চেকপয়েন্টগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সীমান্ত পারাপারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী কম্বোডীয় শহরগুলোর বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেয় থাই কর্তৃপক্ষ।

এর প্রতিক্রিয়ায় কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফল ও সবজি আমদানি বন্ধ করে দেয় এবং থাই সিনেমা ও নাটকের সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় একাধিক স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এর জেরে উভয় দেশ নিজেদের কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে নেয় এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সীমিত করে ফেলে।

এদিকে গত ১৬ জুলাই এক বিস্ফোরণে থাইল্যান্ডের এক সৈন্য পা হারান। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই আরও একটি বিস্ফোরণে পাঁচ থাই সেনা আহত হন, যাদের একজনের পা উড়ে যায়।

সবশেষ আজ বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধপরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী সুরিন প্রদেশের ফানম ডঙ রাক এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন দেশটির শিক্ষামন্ত্রী নারুমোন পিনোসিনাওয়াত।

অন্যদিকে, সীমান্ত সংকট ঘিরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বর্তমানে যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রভাবশালী রাজনীতিক হুন সেন। তবে একইসঙ্গে দেশবাসীকে শান্ত থাকার এবং আতঙ্ক না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে হুন সেন বলেন, “আজ থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে কম্বোডিয়ার সেনাদের ওপর আগ্রাসী হামলা চালিয়েছে। আমাদের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এই হামলার নির্দেশ দিয়েছে থাই সামরিক বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড।”

ফেসবুক পোস্টের কয়েক ঘণ্টা পর এক ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, “থাইল্যান্ড আগেই জানিয়ে দিয়েছিল যে, তারা সীমান্তের তা মোয়ান থম মন্দিরের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেবে। আজ সকালের বিমান হামলার মাধ্যমে তারা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।”

তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ ছাড়া আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। তবে প্রিয় দেশবাসী, দয়া করে আতঙ্কিত হবেন না। বাজারে অতিরিক্ত ভিড় করবেন না, পণ্য মজুত বা বাড়তি দামে বিক্রি থেকেও বিরত থাকুন।”

এদিকে দুই দেশের এই সংকট থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন শিনাওয়াত্রা যিনি মাত্র ৩৮ বছর বয়সে দেশের নেতৃত্বে আসেন, তাকে ১ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

জুন মাসে কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে তার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। যেখানে তিনি নিজের দেশের সেনাবাহিনী নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেন। এতে সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে মতবিরোধের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয় এবং শিনাওয়াত্রা এখন স্থায়ীভাবে ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা, রয়টার্স

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত