ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ বাজার থেকে বাদ পড়তে পারে বাংলাদেশ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত আমদানিকৃত ওষুধের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ খুব বেশি উদ্বিগ্ন নয়। এর কারণ হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ বর্তমানে তুলনামূলকভাবে কম। তবে এই শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে মার্কিন বাজার হারাতে পারে বলে শিল্প সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করছেন। এর অর্থ হলো, বিশ্বের অন্যতম লাভজনক এই ওষুধ বাজারে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য রপ্তানি সম্প্রসারণও মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়বে।
রপ্তানি উন্নয়র ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-এ বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি ২০২৪ অর্থবছরের ২০৫.৪৮ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২১৩.১৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১০ শতাংশেরও কম।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম উল্লেখ করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত মোট ওষুধের পরিমাণের ৫ শতাংশ তার কোম্পানির দখলে। তিনি বলেন, বর্তমান কম রপ্তানি চিত্রের কারণে এই শুল্ক আরোপ হলেও তাৎক্ষণিক প্রভাব সীমিত থাকবে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী বাজারের সম্ভাবনা হারানোর বিষয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান ওষুধ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা, রেনেটা এবং এসকেএফ। এই কোম্পানিগুলো হয় মার্কিন-ভিত্তিক সংস্থাগুলোর দ্বারা চুক্তিবদ্ধ প্রস্তুতকারক হিসেবে ওষুধ রপ্তানি করে অথবা তাদের সাথে মুনাফা-ভাগাভাগির অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ব্যবসা করে। উভয় মডেলেই, অর্জিত মুনাফা খুব বেশি নয়। তাই, যদি ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে মার্কিন কোম্পানিগুলো উচ্চ শুল্কের সম্মুখীন হওয়া বিদেশি কোম্পানিগুলির সাথে কাজ করতে নিরুৎসাহিত হবে।
এদিকে, প্রতিবেশী ভারত এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ভারত থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর ট্রাম্পের হুমকি দেওয়া শুল্কের প্রভাবকে হ্রাস করতে পারে। ভারতের ওপর আরোপিত শুল্ক সম্পর্কে জানতে কিছু সময় লাগলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পণ্যের (ওষুধ ব্যতীত) ওপর বিদ্যমান ১৬ শতাংশ শুল্কের অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ সরকার এই ঘোষিত সময়সীমা – ১লা আগস্ট – এর আগে শুল্ক কমানোর জন্য মার্কিন সরকারের সাথে কাজ করার চেষ্টা করছে, যাতে পোশাক রপ্তানি, যা বার্ষিক প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার আয় করে, অপ্রভাবিত থাকে। তবে ওষুধ রপ্তানির বিষয়টি আলোচনার এজেন্ডায় নেই।
যদি এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক হ্রাস না করা হয়, তবে তা ১লা আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। তবে ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশ এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো আরোপিত শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে এক বছরের বর্ধিত সময় পেতে পারে।
এদিকে, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জেনেরিক ওষুধের প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ তাদের দখলে বলে জানা গেছে। দ্যা হিন্দু’র মতে, ২০২৫ অর্থবছরে ভারতের ওষুধ রপ্তানি ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
স্কয়ার ফার্মার সিএফও জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ভারতীয় ওষুধ নির্মাতারা যথেষ্ট নীতিগত সহায়তা পেয়ে থাকেন। তাদের বিদেশে অফিস খোলার জন্য অবাধ পুঁজি স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়া হয় এবং রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য কম সুদে ঋণ প্রদানের জন্য ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সরকারি তহবিলে তাদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। যার ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে অফিস স্থাপন করেছে এবং ইউএস এফডিএ তাদের বৃহত্তম বিদেশী কার্যালয় ভারতেই স্থাপন করেছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশী নির্মাতারা নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাধার সম্মুখীন হন। বিদেশে পুঁজি স্থানান্তরের জন্য পর্যায়ক্রমে অনুমোদন প্রয়োজন এবং বিদেশে ইকুইটি বিনিয়োগের জন্য কোনো স্পষ্ট প্রক্রিয়া নেই। মূল বাজারগুলিতে অফিস বা অপারেশনাল সেটআপ ছাড়া, বাংলাদেশী ওষুধ রপ্তানিকারকদের মধ্যস্থতাকারী বা অংশীদারিত্বের ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হয়, যা তাদের লাভজনকতা এবং বাজারের উপস্থিতি সীমিত করে।
রেনেটা'র কোম্পানি সচিব মো. জুবায়ের আলম বলেন, মার্কিন ওষুধের বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এবং কঠোর পণ্য অনুমোদন প্রক্রিয়ার অধীন, যা নতুন শুল্ক ছাড়াই প্রবেশকে কঠিন করে তোলে।
চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও কিছু স্থানীয় ওষুধ নির্মাতা ইউএস এফডিএ (Food and Drug Administration) সার্টিফিকেশন পেয়েছে। নীতিগত সহায়তা সহ একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা গেলে বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানি থেকে যথেষ্ট রাজস্ব আয় করতে পারে। জুবায়ের আলম বলেন, যদি একটি ওষুধ ৭ টাকা পিস দরে উৎপাদন করা হয়, তবে তা মার্কিন বাজারে ১ ডলার পিস দরে বিক্রি হয়। কিন্তু বাংলাদেশী রপ্তানিকারকরা এজেন্সির মাধ্যমে রপ্তানি করার কারণে এই খরচের সুবিধা পান না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে নীতিগত বাধা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের ওষুধ নির্মাতারা এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার বাজারগুলো অন্বেষণ অব্যাহত রেখেছেন, যেখানে কম দাম এবং নমনীয় পেমেন্টের শর্তের কারণে চাহিদা রয়েছে। তবুও শিল্প নেতারা একমত যে, মার্কিন বাজার এর আকার এবং ওষুধের উচ্চ মূল্যের কারণে একটি আকর্ষণীয় বাজার হিসেবে রয়ে গেছে। জুবায়ের আলম বলেন, "আমাদের বৈশ্বিক পদচিহ্ন আরও বাড়ানোর কথা ভাবলে এই শুল্ক আমাদের জন্যও বড় মাথা ব্যথার কারণ হবে।"
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে শেয়ারবাজারের ১১ কোম্পানিতে
- কোম্পানি পুরোদমে উৎপাদনে, তারপরও শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা!
- বিও অ্যাকাউন্টের ফি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিল বিএসইসি
- মার্জারের সাফল্যে উজ্জ্বল ফার কেমিক্যাল
- এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ৫ কোম্পানি
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর প্রথম ‘নো ডিভিডেন্ড’
- শেয়ারবাজারে মিডল্যান্ড ব্যাংকের নতুন যাত্রা
- তদন্তের খবরে থামছে দুই কোম্পানির ঘোড়দৌড়
- আট কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি
- নতুন উচ্চতায় অগ্রসর হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার
- সর্বনিম্ন দামে আটকে গেল ৭ কোম্পানির শেয়ার
- ডেনিম উৎপাদন বাড়াতে এভিন্স টেক্সটাইলসের বড় পরিকল্পনা
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার
- তিন কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা