ঢাকা, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

মার্কিন পাল্টা শুল্ক নিয়ে নজিরবিহীন চাপে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

ডুয়া নিউজ- অর্থনীতি
২০২৫ জুলাই ২১ ০০:৪০:২৮
মার্কিন পাল্টা শুল্ক নিয়ে নজিরবিহীন চাপে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশ নজিরবিহীন এক পরিস্থিতিতে পড়েছে, এমনটাই মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেছেন, "বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কখনো এ ধরনের বেকায়দায় পড়েনি। এ ধরনের পাল্টা শুল্কের ইতিহাস আগে কখনো নেই।" এটি বাংলাদেশের বাণিজ্য কূটনীতির ইতিহাসে এক নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

রোববার (২০ জুলাই) বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় বাণিজ্যসচিব এই মন্তব্য করেন।

বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি ও টেলিযোগাযোগবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ছাড়াও অর্থ, খাদ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য, তথ্য, আইসিটি, শিল্পসহ ১১টি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয়ে একটি অবস্থানপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে তৃতীয় দফায় সম্ভাব্য আলোচনার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো জানায়নি মার্কিন বাণিজ্য দপ্তর (ইউএসটিআর)। এ নিয়ে তৃতীয় ও চূড়ান্ত দফা আলোচনার সময়সূচি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ই-মেইলের জবাবে আরও অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।

বাণিজ্য সচিব তার বক্তব্যে উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্য নীতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ১৯৪৭ এর পর থেকেই উন্নত দেশগুলোর ইতিহাস ছিল গরিব দেশগুলোকে ছাড় দেওয়া। কীভাবে তাদের বাড়তি ট্যাক্সে ছাড় দেওয়া যায়। তারপরও দেখা গেল অনেকে এটা করে না। তখন কোটা দেওয়া হলো। পরে দেখা গেল কোটায় সমস্যা হচ্ছে। এরপর কোটা তুলে দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি মার্কেট অ্যাক্সেস দিয়ে দিল, ভ্যালু অ্যাডিশন কমিয়ে দিল।

তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশ তো এ ধরনের কাজ করেছে। তারা তো কখনো উচ্চ শুল্ক বসানো নিয়ে কিছু করেনি। ফলে এ অবস্থা যে বিশেষ একটা অবস্থা এটা বুঝতে হবে। আমরা মূল পজিশন পেপার দিয়ে দিয়েছি। এখন কিছু বিষয় আছে যেগুলো কান্ট্রি স্পেসিফিক। যেমন আমার দেশের জন্য যেটা সেটা তো চীন, জাপান, ভিয়েতনাম কারও জন্য না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র অনুযায়ী, বাণিজ্য সংক্রান্ত ছাড় দেওয়ার সব মানসিকতা রয়েছে বাংলাদেশের। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কিছু পণ্যে বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার সহজ করা এবং শুল্ক ছাড় দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে অ-বাণিজ্যসংক্রান্ত চুক্তি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়।

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক সংক্রান্ত একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের বিষয়ে দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর)-এর সঙ্গে তৃতীয় দফার আলোচনা শুরুর আগে বাংলাদেশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার পাশাপাশি—বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসারত মার্কিন কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসব প্রস্তুতির পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক হার কমানো নিয়ে পরবর্তী দফায় আলোচনায় বসবে বাংলাদেশ।

আলোচনার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রোববার আরও কয়েকটি নতুন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়। এসব বৈঠকের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে—যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া সুবিধা ও শর্ত কতটা মানা সম্ভব এবং বাংলাদেশের স্বার্থ কতটা রক্ষা করা যাবে।

বিশেষভাবে স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই সম্ভাব্য চুক্তিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি জটিল ও নজিরবিহীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, যা একপ্রকার কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছে দেশের পুরো বাণিজ্য কাঠামোকে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত