ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে ৪-৫ বছর লাগবে : গভর্নর

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ২৫ ১২:৩৩:৩৩
বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে ৪-৫ বছর লাগবে : গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে ৪ থেকে ৫ বছর সময় লাগতে পারে। এটি একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

তিনি বলেন, “এখনই নির্দিষ্ট করে পাচার হওয়া টাকার পরিমাণ বলা সম্ভব নয়। কারণ অনেক সম্পদ এখনও ‘বার্ড ইন দ্য বুশ’ অর্থাৎ ধরাছোঁয়ার বাইরে। যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে সেগুলো নিয়েই এখন কাজ করছি। প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে পাচারকৃত সম্পদ ফ্রিজ করে আটকে রাখা এরপর আইনি পথে তা ফেরত আনা।”

দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন গভর্নর।

গভর্নরের কাছে জানতে চাওয়া হয় এস আলম গ্রুপের প্রক্সি বা বেনামে শেয়ার ও ঋণের প্রকৃত মালিকানা কীভাবে আদালতে প্রমাণ করা হবে? জবাবে তিনি বলেন, “অনেক কাগজপত্রে প্রকৃত মালিকদের নাম না থাকলেও ব্যাংক পর্যায়ে ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, অর্থ ঘুরেফিরে একটি নির্দিষ্ট পরিবারের কাছেই যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে রাজসাক্ষ্য পাওয়া যেতে পারে যারা নিজেরাই লেনদেনে জড়িত ছিলেন এবং এখন সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী।”

অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে গভর্নর জানান, “যদি দুদক মামলা করে তাহলে তা অপরাধমূলক (ক্রিমিনাল) মামলায় পরিণত হয় এবং সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের সুযোগ সীমিত। এজন্যই শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন মামলা কোন ধারায় চলবে। এই কাজকে আমরা বলি ‘ডিকনফ্লিক্টিং।’ এর জন্য একটি বিশেষ প্যানেল গঠন করা হচ্ছে যারা মামলাগুলো পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত দেবে সিভিল না ক্রিমিনাল। এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”

গভর্নর বলেন, “আমি শুরু থেকেই বলে আসছি আমাদের লক্ষ্য এক্সচেঞ্জ রেটের স্থিতিশীলতা তবে তা যেন বাজারভিত্তিক হয়। মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রি করিনি। বাজার থেকেই ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশি পাওনাগুলো পরিশোধ করা হয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করেছিল বিনিময় হার ১৫০-১৭০ টাকা পর্যন্ত চলে যাবে কিন্তু তা হয়নি।”

আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমদানি করানো বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব নয়। এখন আমদানির ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। চাইলে যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারে। পণ্যের সংকট নেই, বাজারে সবকিছুই পাওয়া যাচ্ছে। তাই জোর করে আমদানি বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন দেখি না। বাজারকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে।”

নতুন মুদ্রানীতি সম্পর্কে গভর্নর বলেন, “আমার অবস্থান স্পষ্ট পলিসি রেট ও মূল্যস্ফীতির মধ্যে অন্তত ৩ শতাংশ ব্যবধান থাকতে হবে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশ হলে পলিসি রেট হবে ৭ শতাংশ। এর মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৮-৯ শতাংশে রাখা সম্ভব হবে। তবে এর জন্য কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করতে হবে যেমন মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা।”

তিনি আরও বলেন, “মুদ্রানীতির এই কাঠামো দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত