ঢাকা, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রাম্পের মাথা ২১ মিলিয়ন ডলার!

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুলাই ০৯ ০৯:২৬:২৩
ট্রাম্পের মাথা ২১ মিলিয়ন ডলার!

সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনার পটভূমিতে ফের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনার কথা সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটি।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ জানান, সম্প্রতি ইরানের বিরুদ্ধে টানা ১২ দিনের যুদ্ধে খামেনিকে হত্যা করতে চেয়েছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। এরপর ট্রাম্প নিজেই এই পরিকল্পনার বিষয়ে মন্তব্য করেন। বিষয়টি সামনে আসার পর ইরানের একাধিক শীর্ষ ধর্মীয় নেতার কড়া প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

দুই প্রভাবশালী ইরানি ধর্মগুরু ফতোয়া দিয়েছেন, খামেনিকে হত্যার চেষ্টার জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হত্যা করা ‘জায়েজ’। এই ফতোয়া বেশ কয়েকজন শীর্ষ আলেম ও সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলের সমর্থন পেয়েছে। এমনকি এই আহ্বানকে ঘিরে অনলাইনে অর্থ সংগ্রহের অভিযোগও উঠেছে।

সোমবার (৭ জুলাই) ইরানের রাষ্ট্রনিযুক্ত ১০ জন শীর্ষ আলেম এক খোলা চিঠিতে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে ‘কাফের যোদ্ধা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের সরকারি ইসলামিক প্রচার সংস্থার প্রধান মনসুর ইমামি আরও এক ধাপ এগিয়ে ঘোষণা করেন— যদি কেউ ট্রাম্পকে হত্যা করে তাকে ১০০ বিলিয়ন তোমান (প্রায় ১.১৪ মিলিয়ন ডলার) পুরস্কার দেওয়া হবে।

এরই মধ্যে “থারডটআইআর” নামের একটি ইরানি ওয়েবসাইটে প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে হত্যার জন্য অর্থ সংগ্রহ চলছে—এমন অভিযোগও উঠেছে। সেখানে দেখা গেছে এখন পর্যন্ত প্রায় ২১.৮৭ মিলিয়ন ডলার অনুদান জমা পড়েছে।

ওয়েবসাইটটিতে পারসি, আরবি ও হিব্রু ভাষায় লেখা রয়েছে- “যারা ইমাম মাহদির প্রতিনিধির জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে তাদের বিচার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে যারা সফল হবে তাদের যথাযোগ্য পুরস্কার দেওয়া হবে।”

তবে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। সোমবার টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সাম্প্রতিক এসব ফতোয়া ইরানের সরকার কিংবা সর্বোচ্চ নেতার অবস্থান নয়। তার ভাষায়, “আমার জানা মতে, এসব বক্তব্য বা ফতোয়া সরাসরি ট্রাম্প বা অন্য কারো বিরুদ্ধে নয়। সরকার বা আয়াতুল্লাহ খামেনির সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই।”

তবে এর বিপরীতে খামেনির ঘনিষ্ঠ এক রক্ষণশীল আলেম আলিরেজা পানাহিয়ান ১২ দিনের যুদ্ধের সময় মোসাদের হুমকির প্রতিশোধ নিতে মুসলমানদের ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে হত্যার আহ্বান জানান।

তিনিও ‘মোহারেব’ বা ‘আল্লাহর শত্রু’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “যারা খামেনির বিরুদ্ধে হুমকি দেয় তাদের হত্যা করা ধর্মীয় দায়িত্ব।”

ইরানের আরও দুই শীর্ষ আলেম—আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি ও আয়াতুল্লাহ হোসেইন নুরি হামেদানি পৃথকভাবে একই ধরনের ফতোয়া দিয়েছেন।

সবশেষে খোরাসান প্রদেশে সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি আহমেদ আলমোলহোদা বলেন, “যারা খামেনিকে অপমান করে তারা ধর্মত্যাগী। ইসলামি বিপ্লবের স্বার্থে এদের প্রতিরোধ করা আবশ্যক।”

এই পরিস্থিতি অনেকের মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৮৯ সালের সেই আলোচিত ফতোয়ার ঘটনা যখন সালমান রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেইনি। বহু বছর পর সেই ঘটনার রেশ ধরে ২০২২ সালে নিউ ইয়র্কে ছুরিকাঘাতে রুশদি মারাত্মক আহত হন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত