ঢাকা, শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২

নতুন করে মহাবিপদে ইরান

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ আগস্ট ২৩ ১০:১৫:৫০
নতুন করে মহাবিপদে ইরান

ইরানের দীর্ঘতম এবং একমাত্র নৌযান চলাচলের উপযোগী নদী কারুন ক্রমেই হারাচ্ছে তার স্বাভাবিকতা। খরা, প্রবাহ হ্রাস, রাসায়নিক দূষণ এবং জলাভূমি ক্ষয়ের কারণে নদীটির বড় একটি অংশ অদূর ভবিষ্যতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কারুন-৩, কারুন-৪ এবং গোতভান্দের মতো বাঁধের কারণে নদীর পানির স্তর ব্যাপকভাবে কমে গেছে। বহু বছর ধরে ইরানের বাঁধ নির্মাণ নীতি অস্থিতিশীল বলে সমালোচিত হচ্ছে। দুর্বল শাসনব্যবস্থা ও স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা উপেক্ষিত হওয়ায় এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

জলাভূমি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ আলী আরভাহি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নদীর সংকটের প্রধান কারণ হলো বাঁধ নির্মাণ, ইসফাহান ও ইয়াজদের মতো প্রদেশে পানি স্থানান্তর এবং খুজেস্তানে আখ ও ধানের মতো পানি-নির্ভর ফসল চাষ। কারুন-৩ ও গোতভান্দ বাঁধ খুজেস্তানে, আর কারুন-৪ অবস্থিত চাহারমহল ও বখতিয়ারিতে।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কারুনের প্রবাহ প্রতি সেকেন্ডে নেমে এসেছে ১০০ ঘনমিটারের নিচে, যেখানে একসময় তা ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ ঘনমিটার।

পানি সংকট ও বায়ু দূষণ

খুজেস্তান আখ চাষের একটি প্রধান কেন্দ্র। বর্তমানে ৮০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আখ চাষ করা হচ্ছে, যদিও আধা-শুষ্ক জলবায়ুতে এটি টেকসই নয়। এতে সীমিত পানি সম্পদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে।

একইসঙ্গে খুজেস্তান ইরানের সবচেয়ে দূষিত প্রদেশে পরিণত হয়েছে। এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং সিস্টেমের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার প্রদেশটির একাধিক শহরে বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর (লাল স্তর) হিসেবে রেকর্ড হয়। আহভাজে সূচক ছিল ১৬৮, হেন্দিজানে ১৬৭, বেহবাহানে ১৬৩, রামহরমোজে ১৫৬, আর আন্দিমেশক ও ওমিদিয়াহে ছিল ১৫৫। নিরাপদ মাত্রা হলো ০-৫০ আর ১০০-এর ওপরে যেকোনো মান অস্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়।

বিরূপ জলবায়ুর প্রভাব

অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ইরান এখন তীব্র পানির অভাব ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো জাতীয় চ্যালেঞ্জে জর্জরিত। কৃষি খাতও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশবিদ মনসুর সোহরাবির মতে, দেশের অব্যবস্থাপনা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে। যখন প্রতিরোধের সুযোগ ছিল তখন কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

গত এক বছরে ইরানে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃষ্টিপাত কমেছে ৪৫%। ফলে দেশজুড়ে মরুকরণ দ্রুততর হচ্ছে।

কারুন নদী জাগ্রোস পর্বতমালা থেকে শুরু হয়ে খুজেস্তান প্রদেশ পেরিয়ে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানকে টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই কারুন নদীকে বাঁচাতে হবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত