ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

তিন কোম্পানির কারখানা বন্ধ, ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের

২০২৫ আগস্ট ২২ ১৯:৩০:১৬

তিন কোম্পানির কারখানা বন্ধ, ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানি - রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম), নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেড এবং আরামিট সিমেন্ট - এর কারখানা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীরা হতাশ এবং লোকসানের শিকার হচ্ছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পৃথক বিবৃতিতে এই তিনটি কারখানার বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিবৃতি অনুযায়ী, ডিএসই-এর একটি দল ২১ আগস্ট আরএসআরএম, ২২ জুলাই আরামিত এবং ২১ জুলাই নূরানী ডাইং-এর কারখানা পরিদর্শন করে সেগুলো বন্ধ পায়। যেসব বিনিয়োগকারী ডিভিডেন্ড এবং শেয়ারের দামের ওপর নির্ভর করে, তাদের জন্য এই দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ক্রমশ বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছে। আরামিট এবং নূরানী ডাইং-এর বিনিয়োগকারীরা বছরের পর বছর ধরে কোনো ডিভিডেন্ড পাচ্ছেন না, অথচ এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম ক্রমাগত কমছে।

নূরানী ডাইং-এর বিনিয়োগকারীরা বলছেন, "আমরা মূলত ডিভিডেন্ড পাওয়ার জন্যই বিনিয়োগ করি। যখন একটি কোম্পানি এমন সমস্যায় পড়ে যে তার কারখানা বছরের পর বছর বন্ধ থাকে, তখন নিশ্চিতভাবেই বিনিয়োগকারীদের লোকসান হয়।" বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) নূরানী ডাইং-এর শেয়ারের দাম কমে ২ টাকা ৮০ পয়সায় নেমে আসে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে কোম্পানিটি ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

কোম্পানিটি ২০১৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর দুই বছর পর আর্থিক সংকটে পড়লে এর কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে জানা যায়, কোম্পানিটি একাধিক ব্যাংকের কাছে ঋণ খেলাপি। কোম্পানিটি দীর্ঘদিন যাব বিনিয়োগকারীদের কোন তথ্য জানাচ্ছে না। ডিএসইর আর্কাইভে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধের খবর ছাড়া আর কোন তথ্য নেই।

একসময় ভালো ডিভিডেন্ড প্রদানকারী কোম্পানি আরএসআরএম-এর উৎপাদনও কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ২০২০ সাল থেকে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় তাদের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করায় আরএসআরএম-এর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি ও ঋণ আদায়ের জন্য বেশ কয়েকটি মামলাও করা হয়েছে। এ কারণে কোম্পানিটি প্রতি বছর লোকসান গুনছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোনো আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি।

আরএসআরএম-এর শেয়ারের দাম বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ৯.৯০ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা এক বছর আগে ২০ টাকার উপরে ছিল। পাঁচ বছর আগে, অর্থাৎ ২০২০ সালে এটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ডদিয়েছিল। যদিও কোম্পানিটির সচিব মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন দাবি করেছেন, কারখানা চালু আছে কিন্তু কার্যকরি মূলধনের অভাবে উৎপাদন হচ্ছে না।

এদিকে, গত আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে আরামিট লোকসানে পড়ে। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান রুখমিলা জামান সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী, যিনি অর্থ আত্মসাৎ, জমি দখল এবং দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ১২ টাকা ৯০ পয়সা।

বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোকে তাদের ব্যবসা পুনরায় চালু করার, কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনার এবং শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ রক্ষার জন্য সরকারের কাছে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, আর্থিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষায় (অডিটিং) যদি সুশাসন থাকত, তাহলে বিনিয়োগকারীরা অনেক আগেই বুঝতে পারতেন যে একটি কোম্পানি সংকটের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো সতর্কতামূলক লক্ষণ দেখা যায় না, ফলে বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ করেই ক্ষতির মুখে পড়েন।

তারা আরও বলেন, যখন একটি কোম্পানি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়, তখন এর শেয়ারের দাম দ্রুত পড়ে যায় এবং লভ্যাংশ প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-কে দুর্বল কোম্পানিগুলোর ওপর আরও কঠোর নজরদারি রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা তা আগে থেকেই বোঝা যায়।

বিনিয়োগকারীরা জানেন, কোনো কোম্পানি সময়ে সময়ে ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে, এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে যখন সেই ক্ষতি থেকে প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো আশা থাকে না, তখন হতাশা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। আরও বড় সমস্যা দেখা দেয়, যখন বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে থাকে—সেই অজানা পরিস্থিতিই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক কষ্ট ও অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত