ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ কার্তিক ১৪৩২

‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণার পর শেয়ার দামে রেকর্ড দৌড়

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ৩১ ১৫:০৫:৪৩

‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণার পর শেয়ার দামে রেকর্ড দৌড়

হাসান মাহমুদ ফারাবী: শেয়ারবাজারের প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আনোয়ার গ্যালভানাইজিং লিমিটেড ৩০ জুন, ২০২৫ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে। এই ধরনের নেতিবাচক সংবাদ সাধারণত শেয়ারের দরপতনে প্রভাব ফেলে, কিন্তু কোম্পানিটির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা গেল। ডিভিডেন্ড ঘোষণা না হওয়া সত্ত্বেও সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে কোম্পানিটি সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় ৪৮.৫৮ শতাংশ উল্লম্ফন নিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে।

কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) ‘নো ডিভিডেন্ড’ সংক্রান্ত ঘোষণাটি দেয়। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। ডিভিডেন্ড না দেওয়ার খবরে যেখানে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হতে পারতেন, সেখানে কোম্পানির শেয়ারের দামে শুরু হয় উর্ধ্বমুখী প্রবণতা।

ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগের সপ্তাহের ক্লোজিং দর ৬৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে সপ্তাহ শেষে শেয়ারটির ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ৯৩ টাকা ৯০ পয়সায়। এক সপ্তাহেই এর দর বেড়েছে ৩০ টাকা ৭০ পয়সা।

ডিভিডেন্ড না দেওয়ার কারণ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অন্য দিকে ঘুরে যায়—কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে। ডিভিডেন্ডের হতাশা কাটিয়ে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির খবরেই বেশি মনোযোগ দেয়।

আনোয়ার গ্যালভানাইজিং প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৫) প্রতি শেয়ারে আয় (ইপিএস) দেখিয়েছে ২ টাকা ৮৬ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ৮৮ পয়সা। এছাড়া, কোম্পানিটির নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) প্রতি শেয়ারের বিপরীতে ৪ টাকা ২৪ পয়সায় উন্নীত হয়েছে, যা ৩০ জুন, ২০২৪-এর ১ টাকা ৩৮ পয়সা থেকে প্রায় ২০৭ শতাংশ বেশি। এই অভূতপূর্ব আর্থিক উন্নতিই মূলত ডিভিডেন্ডের নেতিবাচক খবরকে ছাপিয়ে শেয়ারের দামে বড় উল্লম্ফন ঘটিয়েছে।

কোম্পানিটি আরও জানিয়েছে, এই উল্লেখযোগ্য ইপিএস বৃদ্ধির মূল কারণ হলো ১২ কোটি ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬ টাকা নন-অপারেটিং ইনকাম (অ-পরিচালন আয়) বৃদ্ধি।

ডিভিডেন্ড ঘোষণার দিন (২৭ অক্টোবর) থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়। ওই দিন ডিএসই থেকে শেয়ারটির উপর কোনো মূল্যসীমা আরোপ করা হয়নি। ওই দিনই শেয়ারটির দাম ২৩.১৯ শতাংশ বেড়ে ৭৮ টাকা ১০ পয়সায় পৌঁছায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে থাকলে গত ৩০ অক্টোবর শেয়ারটির ক্লোজিং দর ৯৩ টাকা ৯০ পয়সায় পৌঁছায়, যা ছিল ৯.৯৫ শতাংশ বা সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা।

কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সংখ্যা ৩ কোটি ২ লাখ। এই সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডিভিডেন্ড বিতরণ না করে কোম্পানিটি ভবিষ্যতে ব্যবসা সম্প্রসারণে মনোযোগ দিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও বেশি লাভজনক হতে পারে। তবে শেয়ারটির দাম বৃদ্ধির পেছনে একটি চক্র কাজ করছে বলে বাজারে গুঞ্জন রয়েছে। সুতরাং শেয়ারটিতে নতুন করে এন্ট্রি নেওয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের চিন্তা-ভাবনা করে এগুতে হবে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করছেন।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত