ঢাকা, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২

নেগেটিভ ইকুইটি মুক্ত করতে মার্জিন ঋণে তালা মারছে বিএসইসি

২০২৫ অক্টোবর ২৭ ০০:২২:৫৯

নেগেটিভ ইকুইটি মুক্ত করতে মার্জিন ঋণে তালা মারছে বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারকে 'নেগেটিভ ইকুইটি'র বিষাক্ত জাল থেকে বের করে আনতে মার্জিন ঋণ নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, নতুন এই কঠোর নিয়মগুলো কেবল বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেবে না, বরং ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাবে। দ্রুতই এই সংশোধিত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হতে পারে।

বিএসইসি কমিশনার মো. সাইফুদ্দীন একটি গণমাধ্যমকে জানান, কিছু মহলের বিরোধিতা সত্ত্বেও, সেকেন্ডারি মার্কেটে ঋণ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে বিএসইসি দৃঢ় অবস্থানে আছে। তিনি স্বীকার করেন, বিদ্যমান নিয়মের দুর্বলতা এবং ঋণদাতা ও বিনিয়োগকারীদের অপরিণামদর্শী আচরণই এই সংস্কারের মূল কারণ।

কারা পাবে মার্জিন ঋণ?

মার্জিন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানি নির্বাচনের শর্তগুলো কঠোর করা হচ্ছে:

• ডিভিডেন্ড শর্ত:** প্রাথমিক পরিকল্পনায় শুধু 'A' ক্যাটাগরির শেয়ারকে মার্জিনযোগ্য রাখা হলেও, এখন শর্ত সাপেক্ষে 'B' ক্যাটাগরির শেয়ারও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তবে শর্ত হলো, সেই কোম্পানিকে কমপক্ষে ৫ শতাংশ বার্ষিক ডিভিডেন্ড দিতে হবে। এর ফলে দুর্বল কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর সুযোগ কমে যাবে।

• ফ্রি ফ্লোট: যে কোম্পানির বাজারে সহজে কেনাবেচাযোগ্য শেয়ারের পরিমাণ (ফ্রি ফ্লোট) ৫০ কোটি টাকার কম, সেগুলোতে আর মার্জিন ঋণ দেওয়া যাবে না।

বিনিয়োগকারীদের কেন এই বিপদ:

বিএসইসি কমিশনার বলেন, গত প্রায় ১৫ বছরে বিদ্যমান নিয়মের ফাঁকফোকরের কারণে বিনিয়োগকারীদের বিপুল সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের অতিরিক্ত তারল্যের সময় অতিরিক্ত মার্জিন ঋণের কারণেই ২০১০ সালের ধসে অসংখ্য খুচরা বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তিনি জানান, বর্তমানে বাজারে নেগেটিভ ইকুইটির পরিমাণ প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ বিলিয়ন টাকা। গত ১৫ বছরে এর কারণে বিনিয়োগকারীদের ৩ হাজার ৩০০ বিলিয়ন টাকা পর্যন্ত সম্পদ গায়েব হয়েছে। এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা লাখ লাখ প্রথম সারির বিনিয়োগকারীর মনে 'যন্ত্রণা ও অবিশ্বাস' তৈরি করেছে। এই 'বিষাক্ত ব্যবস্থা' দূর করতেই বিএসইসি নতুন নিয়ম আনছে।

বিনিয়োগকারীর সুরক্ষায় বিএসইসি-র সুরক্ষা বলয়:

নতুন নিয়মে বিনিয়োগকারীরা অনেক দ্রুত সতর্ক হওয়ার সুযোগ পাবেন-

মার্জিন কল: বিনিয়োগকারীর পুঁজি বা ইকুইটি ২৫ শতাংশ কমলেই এখন ঋণদাতাকে মার্জিন কল বা সতর্কবার্তা দিতে হবে, যা আগে ছিল ৫০ শতাংশ কমার পরে।

পোর্টফোলিও সমন্বয়: পুঁজি ৫০ শতাংশ কমার পরই জোরপূর্বক বিক্রয়ের (Forced Selling) মাধ্যমে পোর্টফোলিও সমন্বয় শুরু করতে হবে, যা আগে ৭৫ শতাংশ ক্ষতিতে শুরু হতো।

বিএসইসি কমিশনার বলেন, এই দ্রুত হস্তক্ষেপের ফলে অসাধু চক্র আর ঋণগ্রহীতাদের পোর্টফোলিওতে নিজেদের লোকসানি শেয়ার গছিয়ে দিতে পারবে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই নতুন নিয়ম কার্যকর হলে বিনিয়োগকারীরা তাদের মূলধনের অন্তত ৫০ শতাংশ ফেরত পাবেন।

প্রতিষ্ঠানগুলোও থাকবে সুরক্ষিত:

দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে মার্জিন ঋণের অর্থ কয়েকটি মাত্র স্টকে ঢালা হয়েছে। এমনকি দু-তিনটি স্টকেই ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ গেছে, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোম্পানির পরিচালক বা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে দেওয়া হয়েছে।

• মোট ঋণসীমা: নতুন নিয়মে, কোনো ঋণদাতা তার মোট নিট মূলধনের তিন গুণের বেশি ঋণ দিতে পারবে না।

• একক ঋণসীমা: এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা বা ঋণদাতার নিট মূলধনের ১৫ শতাংশ (এই দুটির মধ্যে যেটি কম) ঋণ দেওয়া যাবে।

এছাড়াও, ঋণদাতাদের প্রতি তিন মাস অন্তর মার্জিন অ্যাকাউন্টগুলোর একটি রিভিউ রিপোর্ট বিএসইসি-তে জমা দিতে হবে। নেতিবাচক ইকুইটি বহনকারী ১৭৭টি বাজার মধ্যস্থতাকারী সংস্থাকেও এটি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোও দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত