ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২

২০২৫ সালের শেয়ারবাজার: আশা দিয়ে শুরু, আর্তনাদে শেষ

২০২৫ ডিসেম্বর ২৫ ০৮:১২:৩৩

২০২৫ সালের শেয়ারবাজার: আশা দিয়ে শুরু, আর্তনাদে শেষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৫ সালটি দেশের শেয়ারবাজারের জন্য একরাশ আশা নিয়ে শুরু হলেও শেষ হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদের মধ্য দিয়ে। গত আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আসার যে স্বপ্ন বিনিয়োগকারীরা দেখেছিলেন, বছর শেষে সেই সংস্কারের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে সাধারণ মানুষদেরই। ব্যাংক একীভূতকরণ, লোকসানি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন এবং অব্যাহত দরপতনে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও এখন ক্ষতবিক্ষত।

অর্থবছর জুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স-এ ছিল চরম অস্থিরতা। বছরের শুরুতে সূচক ৫ হাজার ২০০ পয়েন্টের ওপরে থাকলেও ব্যাংক একীভূতকরণ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের ঘোষণার পর তা ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)-এর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলামের মতে, সংস্কারের প্রাথমিক প্রভাব সবসময়ই যন্ত্রণাদায়ক হয় এবং বাজার এখন সেই কঠিন সময় পার করছে। বিশেষ করে মার্জিন ঋণের নতুন নিয়মের ফলে ‘ফোর্সড সেল’ বা বাধ্যতামূলক শেয়ার বিক্রির চাপ বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

২০২৫ সালে সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে আর্থিক খাত থেকে। পাঁচটি ব্যাংকের একীভূতকরণ এবং নয়টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আটটির অবসায়ন প্রক্রিয়ার ফলে বিনিয়োগকারীরা ফেস ভ্যালু অনুযায়ী প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হারিয়েছেন। ডিএসইর পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও আক্ষেপ করে বলেন, "অডিটররা যেসব প্রতিষ্ঠানকে সুস্থ বলে সনদ দিয়েছিল, সেগুলো রাতারাতি ভেঙে পড়ল, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ফাটল ধরিয়েছে।"

বাজারের গভীরতা বাড়াতে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি বা আইপিওর কোনো বিকল্প নেই, কিন্তু ২০২৫ সালে একটি কোম্পানিও আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আসেনি। প্রধান উপদেষ্টার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ভালো মানের সরকারি কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে না পারাকে বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বিনিয়োগযোগ্য ভালো শেয়ারের অভাবে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে; গড় দৈনিক লেনদেন গত বছরের ৫৬৬ কোটি টাকা থেকে কমে ৫১০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।

তবে মুদ্রার উল্টো পিঠ হিসেবে বিএসইসি কিছু দৃশ্যমান সংস্কার করেছে। মিউচুয়াল ফান্ডের নতুন নীতিমালা, ডিভিডেন্ড বণ্টন প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং বিও অ্যাকাউন্টের বার্ষিক ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া সালমান এফ রহমান ও সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের মতো ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম জানিয়েছেন, এখন বাজারে একটি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বাজারে আসতে পারবে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত