ঢাকা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো বিপদে ভারত!

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুলাই ০৬ ২২:৫৫:৫২
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো বিপদে ভারত!

পাকিস্তানের নদীর পানি আটকে রাখতে গিয়ে এবার উল্টো বিপদের মুখে পড়েছে ভারত। সীমান্তবর্তী হিমাচল প্রদেশে ভয়াবহ বন্যায় এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৩৭ জন।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মান্ডি জেলায়। সেখানে ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সরকারি হিসাবে, বন্যায় প্রায় ৪০০ কোটি রুপির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । এছাড়া ১৫০টিরও বেশি বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। রাজ্যজুড়ে ৭ জুলাই পর্যন্ত রেড অ্যালার্ট জারি রেখেছে প্রশাসন।

চেনাব ও সুতলেজ (শতদ্রু) দুটি নদীই ভারত ও পাকিস্তান দিয়ে প্রবাহিত এবং সিন্ধু জলচুক্তির আওতাভুক্ত। ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাগলিহার বাঁধ ব্যবহার করে ভারত চেনাব নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এই জল-রাজনীতিরই ফলাফল হিসেবে হিমাচল প্রদেশ এখন ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়েছে।

ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা যদিও বলছেন, 'বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এই দুর্যোগ, তবে পানি বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, বাধ্যতামূলক তথ্যপ্রদানে অনীহা এবং হঠাৎ বাঁধ খুলে দেওয়া বা বন্ধ করার মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে।'

এদিকে বন্যা পরিস্থিতির মাঝেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন অভিনেত্রী থেকে সাংসদ হওয়া কঙ্গনা রানাউত। তিনি হিমাচলের মান্ডি আসনের সাংসদ হলেও বন্যার শুরু থেকে তার কোনো খোঁজ নেই বলে অভিযোগ।

বিজেপিরই প্রবীণ নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমরা মানুষের পাশে থাকি, কিন্তু কেউ কেউ থাকেন না, তা নিয়েই মন্তব্য করে লাভ নেই।"

এদিকে বিরোধী কংগ্রেস এক্সে (আগে টুইটার) ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে লিখেছে, "মান্ডির মানুষের প্রতি কঙ্গনার কোনো দায় নেই। এ কথা বলছেন তার দলেরই নেতা।"

পরবর্তীতে কঙ্গনা এক পোস্টে লেখেন, "তিনি এলাকা সফর করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জয়রাম ঠাকুর তাকে রেড অ্যালার্ট থাকার কারণে অপেক্ষা করতে বলেছেন। তবে সমালোচকরা বলছেন, ‘নির্বাচনের সময়েও দুর্যোগ ছিল, তখন ঠিকই মাঠে ছিলেন। এবার কেন নয়?"

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। যদিও এখনো পুরোপুরি পানি আটকে দেওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে চেনাবসহ অন্যান্য নদীর প্রবাহ বাঁধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুরু করেছে। অনেক বিশ্লেষক একে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ বা ‘সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার’ হিসেবে দেখছেন।

তবে এই জল-রাজনীতির শেষ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। কারণ ভারতের প্রধান দুটি নদীর উৎস চীনে। আর ইতোমধ্যেই চীন কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, "পানির রাজনীতি করলে, বিপদটা ভারতেরই বেশি হবে।"

বিশ্লেষকরা বলছেন, 'নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে হাতিয়ার বানিয়ে কূটনৈতিক চাপ তৈরি করা যেমন বিপজ্জনক, তেমনি এর ফল উল্টো ভারতকেই ভুগতে হতে পারে—হিমাচলের বন্যাই তার প্রমাণ।'

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত