ঢাকা, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানের মিসাইল ঠেকাতে ইসরায়েলের খরচ ১.৫ বিলিয়ন ডলার

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুলাই ০৬ ১৯:১২:৪৭
ইরানের মিসাইল ঠেকাতে ইসরায়েলের খরচ ১.৫ বিলিয়ন ডলার

গত মাসে ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের সংঘাতে ইরান থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অন্তত পাঁচটি সামরিক ঘাঁটিতে সরাসরি আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। স্যাটেলাইটভিত্তিক রাডার তথ্যের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শুধু সেনাঘাঁটি নয়, বরং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাতেও আঘাত হানে। তবে ইসরায়েলের নিজস্ব নিরাপত্তা নীতির কারণে এসব ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি—কারণ তারা আশঙ্কা করে, এসব তথ্য ফাঁস হলে ইরান ভবিষ্যতে আরও নিখুঁতভাবে আক্রমণ করতে সক্ষম হবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের ছোড়া অন্তত ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের তেল নফ বিমান ঘাঁটি, গ্লিলট ইন্টেলিজেন্স ঘাঁটি ও জিপোরিত সামরিক কারখানায় আঘাত হানে। এছাড়া আরও ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে, যা ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়।

এই হামলায় অন্তত ২৮ জন ইসরায়েলি নিহত হন, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২৩০০’র বেশি বসতবাড়ি। দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি হাসপাতালও আক্রান্ত হয়, যার ফলে গৃহহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পুরো সংঘাতে ইরান ৫০০টির বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে এবং প্রায় ১,১০০টি ড্রোন ব্যবহার করে। প্রথম কয়েক দিনে হামলার সংখ্যা কম থাকলেও সপ্তম দিন থেকে মিসাইল প্রতিরক্ষা ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানার হার বাড়তে থাকে। সপ্তম দিনে প্রায় ১৬ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা এড়িয়ে আঘাত হানে।

তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণ স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েল তাদের ব্যয়বহুল ইন্টারসেপ্টর মিসাইল সাশ্রয়ের কৌশল নিয়েছিল। দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, ইরানের ৫০০টিরও বেশি মিসাইল ঠেকাতে ইসরায়েলের খরচ হয় প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, ইসরায়েলের ইন্টারসেপ্টর স্টক কমে আসছে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল, যদিও আইডিএফ এ দাবি অস্বীকার করে।

১৯ জুন ইরান তাদের ক্ষেপণাস্ত্রে ক্লাস্টার বোমা ওয়ারহেড ব্যবহার করে, যা আট কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ২০টিরও বেশি বিস্ফোরণ ঘটায়। এর একটি আঘাত হানে আজোর শহরে, যার শব্দ ছিল ছোটখাটো রকেট বিস্ফোরণের মতো হলেও প্রভাব ছিল গভীর।

এ বিষয়ে আইডিএফ মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও জানায়, ‘হামলার সময়ও ইউনিটগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে।’

অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা পাল্টা হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক গবেষক, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও ক্ষেপণাস্ত্র সুবিধাগুলোতে হামলা চালিয়েছে। এ হামলাকে তারা ‘ইরানের ইসরায়েল ধ্বংস পরিকল্পনা থামাতে জরুরি পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

তবে ইরান দাবি করে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং কোনো ধরনের অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্য নেই। পাল্টা জবাবে ইসরায়েল অভিযোগ করে বলেছে, ইরান গোপনে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, পরিদর্শকদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে এবং উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত